Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National Highway

‘অনিয়মেই’ ২ নম্বর জাতীয় সড়কে বিপদ

নানা প্রান্তের চালকেরা সার্ভিস রোড ও গার্ডওয়াল না থাকাকেও দুর্ঘটনার কারণ বলে জানিয়েছেন।

লেন ভেঙে যাতায়াত। দুর্গাপুরের ফরিদপুর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

লেন ভেঙে যাতায়াত। দুর্গাপুরের ফরিদপুর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৪
Share: Save:

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কনভয়ের গাড়িতে ধাক্কা মারার অভিযোগে শেখ কাবুল নামে সাতগ্রামের বাসিন্দা এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার আসানসোল আদালতে হাজির করানো হলে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ দিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে লেন ভেঙে যাতায়াত, ডিভাইডার কেটে ফেলার মতো কয়েকটি অভিযোগ করেছিলেন বাবুল। বিষয়টি নিয়ে ‘চিন্তা’র কথা জানিয়েছেন ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, নানা প্রান্তের চালকেরা সার্ভিস রোড ও গার্ডওয়াল না থাকাকেও দুর্ঘটনার কারণ বলে জানিয়েছেন।

পানাগড় থেকে বারওয়াড্ডা পর্যন্ত ২ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মলয় দত্ত মূলত তিনটি কারণে দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছেন। প্রথমত, রাস্তার মাঝে ডিভাইডার ও লোহার রেলিং ভেঙে সড়ক পাড়াপারের অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়েছে কিছু এলাকায়। তা দিয়ে অবৈধ ভাবে যাতায়াত করছেন পথচারী ও গাড়ির চালকেরা। দ্বিতীয়ত, সার্ভিস রোড থাকা সত্ত্বেও দ্রুত গন্তব্য পৌঁছতে লেন ভাঙার প্রবণতা। ঘটনাচক্রে, শনিবারও দুর্গাপুর-ফরিদপুরের মতো বেশ কিছু এলাকায় লেন ভাঙার চিত্র দেখা গিয়েছে। তৃতীয়ত, অত্যন্ত দ্রুত গতির রাস্তায় রাতে বা সন্ধ্যার দিকে গাড়ির গতি বোঝা সম্ভব হয় না ‘অস্থায়ী রাস্তা’ দিয়ে যাতায়াত করা লোকজন ও চালকদের পক্ষে।

পাশাপাশি, এই রাস্তার নানা অংশে সার্ভিস রোড না থাকা, বা থাকলেও তা অসম্পূর্ণ হওয়ায়, গার্ডরেল না থাকায় বিপত্তি বাড়ছে, অভিযোগ জেলার মুকেশ ভারতী, শেখ সাইনুল-সহ গাড়ির চালকদের। পুলিশের দাবি, শুক্রবার নর্থব্রুকের দুর্ঘটনাস্থলে সার্ভিস রোড নেই। ফলে, একটি চলাচলের কাঁচা রাস্তা থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি রাস্তায় ওঠায় বিপত্তি হয়। স্থানীয় বাসিন্দা অজয় সিংহ, ফেলু সরকারদের বক্তব্য, ‘‘সার্ভিস রোডের অভাবে সাতগ্রাম ফটক, বোগড়া, নর্থব্রুক, নিঘা, শ্রীপুরে রাস্তার ‘ডিভাইডার’ কেটে স্থানীয়রাই এক দিক থেকে অন্য দিকের রাস্তায় পারাপার করেন। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসন ওই জায়গাগুলিতে ‘গার্ডওয়াল’ দিলেও, কয়েকদিন পরেই অবস্থা আগের মতোই হয়ে যায়।’’

এমন নানা পরিস্থিতিতে বরাকর থেকে পানাগড়, পশ্চিম বর্ধমানে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের এই অংশে মোট ১১টি বিপজ্জনক এলাকা রয়েছে বলে দাবি সড়ক কর্তৃপক্ষের। মলয়বাবু জানান, এর মধ্যে কাজোড়ার টপলাইন, রানিসায়র, গুঞ্জনপার্ক, নিঘা ও সাতগ্রাম লাগোয়া এলাকা ‘অতি বিপজ্জনক’। শুক্রবার বিকেলে বাবুলের কনভয়টি দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে এই সাতগ্রাম এলাকাতেই।

কিন্তু কী ভাবে এই রাস্তার বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে? মলয়বাবুর দাবি, ‘‘ভাঙা ডিভাইডার ও লোহার রেলিং মেরামত করে কঠোর ভাবে নিয়ম ভেঙে সড়ক পারাপার এবং লেন ভেঙে উল্টো পথে যান চলাচল রুখতে হবে। পুলিশি হস্তক্ষেপ ছাড়া, এই অনিয়ম রোখা কোনও মতেই সম্ভব নয়।’’ এ দিকে, বাবুল এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘জাতীয় সড়কে বহু জায়গায় রাস্তার মাঝখানে গার্ডরেল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্রুতগতির গাড়িগুলি আচমকা এ সব গার্ডরেলের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’’ যদিও, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (ট্র্যাফিক) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘সড়কের বিপজ্জনক অঞ্চলে গার্ডরেল বসিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় সার্ভিস রোড না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। অনিয়ম রুখতে ধারাবাহিক অভিযান

চালানো হচ্ছে।’’

ডানকুনি থেকে পানাগড় পর্যন্ত ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প আধিকারিক স্বপন মল্লিক বলেন, ‘‘কলকাতাগামী লেনে একটি বেসরকারি সংস্থার তেলের পাইপলাইন রয়েছে। সেটি সরাতে বলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। উল্টো দিকের লেনে রয়েছে জমির জট। এগুলি দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তার পরেই সার্ভিস রোডের কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Highway Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE