দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের স্টিল হাউস বস্তি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
চোর সন্দেহে দুই যুবককে মারধর, জনতার ছোড়া ইটে পুলিশের জখম হওয়া, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের লাঠি।— এমনই নানা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে ধুন্ধুমার বাধল দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের স্টিল হাউস বস্তি এলাকায়।
দুর্গাপুর থানা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই বস্তিতে চার জন যুবক আবগারি দফতরের বোর্ড লাগানো একটি মালবাহী গাড়িতে একটি গরু তোলার চেষ্টা করে। এলাকাবাসী তাঁদের দেখে ফেললে দু’জন চম্পট দিলেও বাকি দু’জনকে ধরে ফেলে জনতা। এলাকাবাসীর দাবি, কেন গরু তোলা হচ্ছিল জানতে চাওয়া হলে ওই দু’জন জানান, তাঁদের এক জন পাঠিয়েছেন। সেই ব্যক্তির বাগানের গাছ খেয়ে নিয়েছে গরুটি। তাই সেটিকে ধরা হচ্ছিল বলে ওই দুই যুবক জানান, দাবি বাসিন্দাদের। এর পরেই এলাকাবাসীর একাংশ ওই দু’জনকে গরু চোর সন্দেহে হাত বেঁধে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যেতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।
এর পরেই শুরু হয় গোলমাল। বাসিন্দারা পুলিশকে জানান, এলাকায় কয়েকটি খাটাল রয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকটি গরু চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগও জানানো হলেও ঘটনার কিনারা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু সিংহের অভিযোগ, ‘‘এর আগে আমার গরু চুরি হয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।’’ কয়েক জন পুলিশের কাছে ধৃত দুই যুবকের ‘শাস্তি’-র ব্যবস্থা করা হবে কি না, কত দিনের মধ্যে গরু চুরির কিনারা হবে এমনই নানা বিষয়ে নির্দিষ্ট উত্তর চান। সঙ্গে এ-ও জানানো হয়, নির্দিষ্ট করে পুলিশ কিছু না বললে ওই দুই যুবককে ছাড়া হবে না।
তবে বিষয়টি নিয়ে সেই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়। তার পরেই জনতার একাংশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, আলোচনার মাঝেই পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইট। মাথায় চোট পান এ-জোন ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সিদ্ধিনাথ অধিকারী। আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারের গায়ে ইট লাগে। তাঁদের ডিএসপি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়।
আরও পড়ুন: শুয়োর চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনি’
এলাকাবাসী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালায় পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। ওই দুই যুবককে থানায় আনা হয়। পাশাপাশি পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে আটক করা হয় চার জনকে।
বিষয়টি নিয়ে দুর্গাপুর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারম্যান মৃগেন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘‘গরু চোর সন্দেহে এলাকার বাসিন্দারা দু’জনকে ধরেছিলেন। পুলিশ তাঁদের আনতে গিয়ে আক্রান্ত হয় বলে জেনেছি।’’ পুলিশ জানায়, ধৃত দুই যুবকের বাড়ি পানাগড়ে। তাঁদের জেরা করে প্রকৃত ঘটনা কী, তা জানার চেষ্টা চলছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে চার জনকে আটক করা হয়েছে।’’ তবে লাঠি চালানোর অভিযোগ মানেননি ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি উঁচিয়ে উত্তেজিত জনতাকে জোর করে এলাকা ছাড়া করা হয়।’’
পুলিশ আরও জানিয়েছে, আবগারি দফতরের বোর্ড থাকলেও গাড়িটি সংশ্লিষ্ট দফতরের নয় বলে জানা গিয়েছে। গাড়ির মালিক কে বা কারা, তা ‘নম্বর প্লেট’ দেখে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে আবগারি দফতরের নামে ওই বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছিল, তদন্ত চলছে সে বিষয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy