সিপিএম ও বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে নির্দিষ্ট করে গাড়ুই সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তৃণমূলের ইস্তাহারে তা নির্দিষ্ট করে বলা নেই। তবে, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে শহরের নদীগুলিকে সাফ করার কথা বলা হয়েছে। এ সব দেখে, নাগরিকদের বড় অংশেরই মত, এ বারের পুরভোটের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে গাড়ুই ও নুনিয়া সংস্কার। এই প্রেক্ষিতেই কেন এই সংস্কার জরুরি, সে প্রশ্নটি নিয়েও চর্চা হচ্ছে শহরে।
ঘটনাচক্রে, সাম্প্রতিক অতীতে বহু বার, গাড়ুই ‘আসানসোলের দুঃখ’-এর কারণ হয়েছে। ২০১৬-র প্লাবনে হাজিনগরে, ২০১৮-য় কসাইমহল্লার এক ছাত্রের জলে ডুবে মৃত্যু হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষে রেকর্ড প্রায় ৪৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে গাড়ুইয়ের জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক হাজার পরিবার। সে দিনের কথা এখনও ভুলতে পারেন না কসাইমহল্লার সাকিল আনোয়ার। তিনি বলেন, “দোকানের আর কোনও সামগ্রীই অবশিষ্ট নেই। সব তলিয়ে গিয়েছে। এখন দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা।”
কেন সমস্যা তৈরি হচ্ছে? পরিবেশবিদদের মতে, প্রথমত, দু’টি নদীরই দু’পাড়, নদীবক্ষের বহু অংশ দখল করে অবৈধ নির্মাণ তোলা হয়েছে। ফলে, নদী দু’টিই তার নিজস্ব গতিপথ হারিয়েছে। বর্ষায় যখন জল বাড়ে, আসানসোল-সহ লাগোয়া এলাকার নিকাশির জল গাড়ুই দিয়ে বেরোনোর পথ পায় না। ফলে, প্লাবনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, বাসিন্দাদের বেশির ভাগই বর্জ্য নদীতে ফেলেন বলে অভিযোগ। ফলে, নদীর নাব্যতা কমে গিয়েছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ গবেষক সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায় বলেন, “দু’টি নদীই সাফ করতে হবে। কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে, এই দুই নদীর জন্য দামোদরও দূষিত হচ্ছে।” আসানসোলের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তও মনে করেন, “নদী সাফ-সুতরো না থাকলে শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়বে। সাম্প্রতিক বন্যায় শহরের যে চিত্র দেখা গিয়েছে, তাতে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, এখনই সতর্ক হওয়ার সময়।” ভূগোলের শিক্ষক সুরজিৎ সুলেখাপুত্রের পরামর্শ, “এটা দেখা যাচ্ছে, নিম্ন গাড়ুই অববাহিকায় জল বাড়ছে। এটার মোকাবিলা করতে হলে, গাড়ুইয়ের উচ্চ অববাহিকায় প্রচুর সংখ্যায় গাছ লাগাতে হবে। তাহলে, ভূমিক্ষয় রোধ করা যাবে, জলশোষণ ক্ষমতাও বাড়বে।”