থানায় স্মারকলিপি দিয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রীদের মিছিল। ছবি: উদিত সিংহ।
কারোও ওড়না ধরে টান তো, কারোও পিঠে আচমকা চড়। প্রথম প্রথম সন্ধের পরে রাস্তাঘাটে এমন ঘটনা ঘটছিল, কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিকেলেও এমন ‘রোমিও’দের দাদাগিরি চলছে বলে অভিযোগ করছেন তরুণীরা। শুক্রবার বর্ধমান থানায় স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। তবে কারা চড় মারছে, কেন এ রকম আচরণ— তা নিয়ে সবাই অন্ধকারে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তারাবাগ ক্যাম্পাসের আবাসিক ছাত্রীদের অভিযোগ, ভোটের বাজারে যেখান পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চালু রয়েছে শহরে, তার মধ্যেই এমন উটকো হামলার শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। হামলা চালানো হচ্ছে স্কুটি, মোটরবাইক এমনকী সাইকেল থেকেও। পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কের যে, বিকেলের পর থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন ছাত্রীরা। পাশ দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল গেলে ভয়ে কাঁপছেন অনেকে। যদিও বেশির ভাগ ছাত্রীই রুখে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন বর্ধমান থানায় পুরো বিষয়টি জানিয়ে স্মারকলিপিও দেন তারাবাগ ক্যাম্পাসের ৬টি ছাত্রীনিবাসের আবাসিকরা।
তাঁরা জানিয়েছেন, প্রায় এক-দেড় মাস ধরে তারাবাগ ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মোড় পর্যন্ত এবং পাশের বোরহাটের রাস্তাতে এই ধরনের ঘটছে। পুলিশের কাছে তাঁরা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে। ওই সব ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। তাঁরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ছাত্র সংসদের নেতারাও ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। বর্ধমানের আইসি প্রিয়ব্রত বক্সি তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, “বিকেলের পর থেকে পুলিশ টহল থাকবে। তা ছাড়াও দিনভর সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশ মোতায়েন থাকবে।” জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “ওই রাস্তার বেশির ভাগ জায়গা অন্ধকার থাকায় দষ্কৃতীরা সুযোগ নিচ্ছে। ওই সব দুষ্কৃতীরা ধরা পড়লে বোঝা যাবে, এই সব রোমিওগিরির কারণ কী?”
এ দিন সকালে তারাবাগ ক্যাম্পাসে গিয়ে জানা গেল আতঙ্কের নানা উপাখ্যান। তারাবাগ ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে মেডিক্যাল কলেজের মোড়। বিকেলে-সন্ধ্যায় টুকিটাকি জিনিস কেনার জন্য পায়ে হেঁটেই ওই মোড়ে যেতে হয় ছাত্রীদের। মাস খানেক আগে, স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী দেবলীনা রায়চৌধুরী ওই মোড় থেকে ক্যাম্পাসে আসছিলেন। সেই সময় তিনটে মোটরবাইকের একটি দল তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একটি মোটরবাইক থেকে হঠাৎ তাঁর পিঠে চড় মারা হয়। সঙ্গে ছিল কটূক্তি। কিছু বোঝার আগেই চোখের নিমেষে ধাঁ রোমিওর দল। এর কয়েক দিন পরে, ঠিক ওই রাস্তাতে এক ছাত্রীর ওড়না নিয়ে কেটে পড়ে বাইক-বাহিনী। তারপরেও কোনও কারোও মোবাইল ধরে টানছে তো কারোও হাতে মারার ঘটনা চলেছে। স্নাতকস্তরের কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া মৌমিতা মল্লিক, প্রভা বিশ্বাস, সায়নী রায়রা বলেন, “এ রকম ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এমনকী সাইকেলে করে যাওয়ার সময় আমাদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ করছে ওই য়ুবকেরা।” এমসিএ-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনুশ্রী পাল বলেন, “আমরা দল বেঁধে গেলেও রাস্তার ধারে থাকা মেয়েটির সঙ্গে অভব্য আচরণ করছে ওরা।” তাঁরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার সময় অন্ধকার রাস্তায় এই ঘটনা ঘটছিল। সে জন্য আতঙ্কে তাঁরা বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই ক্যাম্পাসের চলে আসছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে বোরহাটে বিকেল বেলাতেও একই ঘটনার জন্য তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তবে অনেক ছাত্রীই বলছেন, ভয় পেলে তো আর রোমিওগিরি বন্ধ হয়ে যাবে না, তাই রুখে দাঁড়াতে হবে নিজেদেরই। স্নাতকোত্তর কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জুলফা খাতুন, মঞ্জুষা মণ্ডলরা বলেন, “সে জন্যই আমাদের বিষয়টি পুলিশকে বলে গেলাম। এরপর এ ধরণের ঘটনা ঘটলে আমরা রুখে দাঁড়াব। তারপর রোমিওগিরি করা ছাড়িয়ে দেব।” তাঁরা ঠিক করেছেন, সন্ধ্যার সময় রাস্তায় বের হলে লঙ্কার গুঁড়ো সঙ্গে রাখবেন। আর সাহস করে প্রতিরোধের রাস্তায় যাবেন। দু’এক জনকে হাতেনাতে ধরতে পাড়লেই রোমিওগিরি করার নেশা কেটে যাবে বলে তাঁদের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy