শুকদেব বাবার দোল উৎসব শুরু হল কাটোয়ার বিকিহাট গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারে কাতারে পুণ্যার্থী আসতে শুরু করেছেন। এমনকী, বাংলাদেশ থেকেও মানুষজন এসেছেন। আজ শুক্রবার বিশ্বশুক মিলন মঠেই শুকদেববাবার কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সমাধি মন্দিরের দ্বারোদঘাটন হবে। এ বছর বাইরে থেকে পুণ্যার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। দোল উপলক্ষে বসেছে বড় মেলাও। উৎসব চলবে পাঁচ দিন।
বাংলাদেশ থেকে এসে শুকদেব ব্রহ্মচারী (যিনি শুকদেব বাবা নামে খ্যাত) কাটোয়ার বিকিহাট গ্রামে পুরনো কাটোয়া-কালনা রোডের ধারে বিশাল জায়গার উপরে আশ্রম গড়েছিলেন। তাঁকে কৃষ্ণ রূপে সাজিয়ে দোল উৎসব করতেন ভক্তেরা। বহু বছর ধরেই উৎসব পালন করা হয় এখানে। প্রায় ৩২ বছর আগে শুকদেব বাবা প্রয়াত হন। তার পরেও উৎসবে ভাটা পড়েনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে আশ্রমে গিয়ে চোখে পড়ে, রাস্তার উপরে তৃণমূলের বড় তোরণ। কিছু দূরে আশ্রমের ফটকের কাছে নীলসাদা কাপড় দিয়ে তৈরি হয়েছে দলের ক্যাম্প। ক্যাম্পের গা ঘেঁষেই গেরুয়া কাপড় দিয়ে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিজেপির শিবির। দুই দলেরই প্রচুর পতাকা রয়েছে। আশ্রম চত্বরের নানা জায়গায় বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পাঁচ দিন ধরে চলবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই প্রেক্ষিতে উৎসবে আসা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। পুরনো কাটোয়া-কালনা রোডের ধারে আশ্রমের সামনেই পাশাপাশি তৃণমূল ও বিজেপির তরফ থেকে শিবির করা হয়েছে। সেখান থেকে পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দলের প্রচারও করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি (কাটোয়া সাংগঠনিক) গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রতি বছরই শুকদেব বাবার দোল উৎসবে দলের তরফে শিবির করি। আগত মানুষজন আমাদের ক্যাম্পে এসে বসেন। পুণ্যার্থীদের সেবা করার সুযোগ পাই।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরী বলেন, “আমাদের দল পরিচালিত খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের তরফে মেলায় সব রকমের সহযোগিতা করা হয়। মেলায় আসা মানুষের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখার উৎসাহ থাকে। তাই, আমরাও প্রতি বছর দোল উৎসবে দলের তরফে শিবির করে থাকি।’’
শুকদেববাবার শিষ্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা হীরক বিশ্বাস বলেন, “মূলত দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া ও হাওড়া জেলা থেকে এ বছর লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে চলেছে। তাঁদের প্রত্যেকের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুণ্যার্থীদের ঢল নামা শুরু হয়েছে। পাঁচ দিনের এই উৎসবে থাকছে নানা ভক্তিমূলক অনুষ্ঠান। শনিবার শহরে সম্প্রীতি যাত্রা বেরোবে।” বাংলাদেশের বাগেরহাট থেকে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ভিসা পেতে সমস্যা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বাবার টানে এসেছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি দোল উৎসবে এখানে আসি। আনন্দ উপভোগ করি।” বিশ্বশুক মিলন মঠের অধ্যক্ষ শুকানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, “শুকদেব বাবার আকর্ষণে প্রত্যেক বছর দোল উৎসবের পুণ্যার্থীদের ভিড় বাড়ে। এ বছর বাবার সমাধি মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ভিড় বেশি হয়েছে। উৎসবে আমরা নানা সামাজিক কাজও করে থাকি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)