গাড়ি থামিয়ে। নিজস্ব চিত্র
মাইথনে ঢোকার মুখে পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, শুধুমাত্র পিকনিকে আসা গাড়ি থেকে টোল আদায়ের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের কাছ থেকেও জোর করে অত্যধিক হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। এমনকি, প্রশাসনিক কাজে যুক্ত আধিকারিকদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই মাইথন লাগোয়া দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বাথানবাড়ি, থার্ড ডাইক, সিদাবাড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দূরদূরান্ত থেকে পিকনিক করতে আসেন অনেকে। ছোট-বড় গাড়ি থেকে টোল আদায় করে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতি। এ বারও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দরপত্র ডেকে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে টোল আদায় করা হয়।
এই টোল আদায় করা হয় কেন? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী কর্মকার ঘাসি জানান, শীতের মরসুমে দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় পিকনিকের দল আসে। বহিরাগতদের জন্য পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা, সাফাই, নিকাশি-সহ নানা নাগরিক পরিষেবা দিতে হয়। এ জন্য পঞ্চায়েত সমিতির বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। সে খরচ তুলতে দূরদূরান্ত থেকে আসা পিকনিক দলের গাড়ি থেকে টোল আদায় করা হয়।
বিডিও (সালানপুর) অদিতি বসুর দাবি, টোল আদায়ের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থাটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পিকনিক দলের গাড়ি ছাড়া, অন্য আর কোনও গাড়ি থেকে টোল আদায় করা যাবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে ঠিকানা-পরিচয় বলা মাত্রই তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির এই নির্দেশ লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মাইথনের ডিভিসি আবাসনে এক পরিচিতের বাড়িতে পরিবার নিয়ে যাচ্ছিলেন আসানসোলের প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। তাঁর দাবি, “নিজের পরিচয় দিয়ে জানাই, পিকনিকে নয়। নিকট আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছি। তবুও রেহাই দেওয়া হয়নি। উল্টে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।” মাইথন রাইট ব্যাঙ্কের বাসিন্দা অনন্যা সরকারের অভিযোগ, “এই রাস্তা দিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করি। প্রতি বারই ১২০ টাকা টোল চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে, এখন কুমারডুবি দিয়ে যাতায়াত করছি।”
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, ২৫ ডিসেম্বর থেকে টোল আদায় করার কথা বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু শুরু হয়েছে প্রায় ১৫ দিন আগে। তা ছাড়া, থার্ড ডাইক বাঁকের মুখে টোলকেন্দ্র বসানোর কথা। কিন্তু তা বসানো হয়েছে কল্যাণেশ্বরীর পরে, মাইথন লেফট ব্যাঙ্ক আবাসন কলোনির পাশে ডিভিসির রাস্তায়। ফলে, মাইথন জলাধারে যাওয়ার পথে সমস্ত গাড়িকেই টোল দিতে হচ্ছে। টোল আদায়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএম নেত্রী শিপ্রা মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর দাবি, “আমাদের সময়ে ভ্রমণকেন্দ্রে নাগরিক পরিষেবার জন্য টোল আদায়ের দরকার পড়েনি। এই টোল আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অটো থেকে ৫০, ছোটো চারচাকা গাড়ি থেকে ১২০ ও বড় বাস বা ট্রাক থেকে ২৫০ টাকা করে টোল নেওয়া হচ্ছে। মোটরবাইক থেকে আপাতত তা নেওয়া হচ্ছে না।
অভিযোগ ও বেনিয়ম প্রসঙ্গে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” বিডিও অদিতি বসু বলেন, “টোল আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার আধিকারিককে ডেকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা থাকলে ব্যবস্থা নেব।” টোল আদায়কারি সংস্থার আধিকারিক মনোজ তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “কর্মীরা কী করেছেন জানি না। বেনিয়ম হয়ে থাকলে, শুধরে নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy