Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বর্ধমানে ধৃত ভাসুর-সহ ৫

প্রৌঢ়াকে পিটিয়ে চুল কেটে নেওয়ার নালিশ

লোকলজ্জার পরোয়া না করে কেন বেয়াইয়ের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি, এই প্রশ্ন তুলে এক প্রৌঢ়াকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ পরিজনদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই প্রৌঢ়ার গায়ে গোবর জল ঢেলে, মাথার চুল কেটেও ‘শাস্তি’ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

লোকলজ্জার পরোয়া না করে কেন বেয়াইয়ের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি, এই প্রশ্ন তুলে এক প্রৌঢ়াকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ পরিজনদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই প্রৌঢ়ার গায়ে গোবর জল ঢেলে, মাথার চুল কেটেও ‘শাস্তি’ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

বর্ধমান শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে পুতুন্ডা গ্রামে রবিবারের ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দারাই ওই মহিলাকে উদ্ধার করে শক্তিগড় ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ ওই মহিলার ভাসুর-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের সোমবার আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এ দিন বর্ধমানের আইসি শান্তনু মিত্র জানান, খবর পেয়েই ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ষড়যন্ত্র করেই সামাজিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের কাছে নির্যাতিত মহিলা তাঁর স্বামী-সহ দশ আত্মীয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর দু’য়েক আগে নির্যাতিতার ছোট মেয়ের সঙ্গে পুতুন্ডা গ্রামেরই এক যুবকের বিয়ে হয়। এই ঘটনার কয়েক মাস পর থেকেই মেয়ের শ্বশুরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন ওই প্রৌঢ়া। গ্রামে জানাজানি হয়ে গেলে তাঁরা চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্রাম ছেড়ে কালনার লেবুতলায় ঘর বাঁধেন। এ দিন বর্ধমান থানায় দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার জামাই বলেন, ‘‘বাবা ও শাশুড়িকে বাড়ি ফেরানোর জন্য আমার নিজের পরিবার এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে নানা ভাবে যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন রকম উপায়ও বের করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সব টোপে কাজ না-হওয়ায় দুই বাড়ি থেকেই আমার স্ত্রীর উপর চাপ দেওয়া শুরু হয়।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কোনও ভাবেই ওই মহিলাকে গ্রামে না ফেরাতে পেরে দুই পরিবারের তরফেই তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ছোট মেয়ে ‘ভাল নেই’। এই খবর পেয়েই মায়ের মন অস্থির হয়ে ওঠে। সামাজিক-লজ্জা কাটিয়ে ওই প্রৌঢ়া কালনা থেকে রবিবার দুপুর ৩টে নাগাদ পুতুন্ডা গ্রামে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। অভিযোগ, পরিজনেরা তাঁকে পাড়ায় ঢুকতে বাধা দেন। মাঠের বা দিনের কাজ সেরে পাড়ার মোড়ে জমা হতে থাকে পরিজনেরা। নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমাকে ঘিরে সবাই বলতে থাকে, ‘বেয়াইকে নিয়ে কেন পালিয়েছেন? তাঁকে লুকিয়ে রেখে গ্রামে এসেছে, এই মহিলাকে ছাড়া যাবে না।’ আমি ওদের বারবার বলি, আমরা কোনও অন্যায় করিনি। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তারা সুখে সংসার করছে। স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যেই বেয়াইকে অবলম্বন করেছি।’’

লিখিত অভিযোগে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, তাঁর কোনও কথায় কান না দিয়ে স্বামী, ভাসুর-সহ বেশ কয়েক জন মিলে প্রথমে তাঁকে মারধর করে। এর পরে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। এলাকার কিছু বয়স্ক মানুষের কথা মতো তাঁর ‘শুদ্ধিকরণ’-এর জন্য অভিযুক্তেরা প্রথমে ওই প্রৌঢ়াকে গোবর জল দিয়ে স্নান করান। তার পরে মাথার চুল কেটে দেয়। গ্রামে ঘোরানোর পরিকল্পনা নেওয়ার সময় গ্রামবাসীদের একাংশই এলাকায় গিয়ে ওই প্রৌঢ়াকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেন।

ওই প্রৌঢ়া পুলিশকে জানিয়েছেন, পূর্ব আক্রোশবশতই তাঁর উপরে নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ওই প্রৌঢ়ার ছোট মেয়ে কিন্তু বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা মায়ের সঙ্গেই আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elderly woman abused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE