নিহত মঙ্গল মান্ডি ও মাকু বাস্কে। নিজস্ব চিত্র
ডাইনি অপবাদে একই পরিবারের দু’জনকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহি থানার নেওড় গ্রামে। পুলিশের দাবি, সম্পর্কে দিদি ও ভাইকে খুন করে তাঁদের দেহ প্রথমে ঘটনাস্থলের কাছেই পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশকর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে বাসিন্দাদের একাংশের বাধার মুখে পড়ে। পরে বিডিও এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললেও দেহ দুটির সন্ধান মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, নেওড়ের পাশের গ্রামের এক বাসিন্দা থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মাকু বাস্কে (৬৫) ও তাঁর ভাই মঙ্গল মান্ডিকে (৬০) মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে দামোদরের চরে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতদের বাড়ি আরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের নেওড় গ্রামের দিঘিরপাড়ে। স্থানীয় সূত্রে ডাইন অপবাদের কথা উঠে এলেও তা সরাসরি মানতে চায়নি জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘ওই দু’জনের মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) এলাকায় তদন্ত করছেন।”
অভিযোগ, ও মঙ্গলকে সোমবার রাত আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান গ্রামেরই কিছু লোক। তারপর ফাঁকা মাঠে ৪০-৫০ জন মিলে তাঁদের পিটিয়ে মারে। তার পর ওই মাঠেরই একটি জায়গাতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেই খবর পেয়ে মাধবডিহি থানার পুলিশ দফায় দফায় গ্রামে গেলেও ভিতরে ঢুকতে পারেনি। বিডিও (রায়না ২) দীপ্যময় মজুমদার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। সে জন্য পুলিশকে তদন্ত করতে বলেছি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ৮০ ঘর আদিবাসী পরিবারের বসবাস। মৃতদের এক ভাইপোর স্ত্রী গত ৬ মাস ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। সোমবার তাঁকে নিয়ে একটি ট্রাক্টরে করে পরিজন ও পড়শিরা জামালপুরের রুক্মিনীতলায় এক ওঝার কাছে যান। ওই ওঝা দাবি করে, মাকু ও মঙ্গল ডাইন। তাঁদের জন্যই ওই বধূর শরীর এত খারাপ থাকছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গ্রামে ফিরে আসেন। মৃতদের আর এক ভাইপো গুরুপদ মান্ডির দাবি, “গ্রামে বিষয়টি ছড়িয়ে যাওয়ার পরে কয়েক জন মিলে কাকা ও পিসিকে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই ডাইন অপবাদে পিটিয়ে মারা হয়। আমরা কয়েক জন প্রতিবাদ করলে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।”
যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, “আর যাই হোক ডাইনি অপবাদে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। আমরা গত কয়েক বছরে এই অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করেছি। তাতে ফলও হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy