প্রতীকী চিত্র।
দরিদ্র লোকশিল্পীদের মাসিক আয়ের শংসাপত্র দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালনা ২ ব্লক অফিসের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই ব্লকের বড় ধামাস পঞ্চায়েতের বারডেলিয়া গ্রামের সাত জন সরকারি ভাতাপ্রাপ্ত লোকশিল্পী এমনই অভিযোগ করেছেন প্রশাসনে। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া জানান, অভিযোগ বিডিও-কে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।
সরকারি তালিকায় নাম থাকা লোকশিল্পীরা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। সরকারি নানা অনুষ্ঠানেও এই সমস্ত শিল্পীরা থাকেন। তার বিনিময়েও তাঁরা কিছু অর্থ পান। তবে সরকারি ভাতা পেতে গেলে প্রতি বছর শিল্পীদের মাসিক আয়ের শংসাপত্র জমা দিতে হয়। মাসিক আয় ৩০০০ হাজার টাকার কম, এমন শিল্পীরাই ভাতা পাওয়ার যোগ্য। আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম বারডেলিয়ায় কাঠি নৃত্য, ঘুঘুর নৃত্য, আদিবাসী নৃত্য-সহ নানান শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকে। তাঁদেরই মধ্যে সাত জন গত ২৬ মে লিখিত অভিযোগে মহকুমাশাসককে জানিয়েছেন, এলাকার পঞ্চায়েত তাঁদের গ্রামের ৫৭ জন লোকশিল্পীকে আয়ের শংসাপত্র দিয়েছিল। সেই শংসাপত্র কালনা ২ ব্লক অফিসে জমা দিয়ে সেখান থেকে আরও একটি আয়ের শংসাপত্রের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু, অফিসের এক কর্মী শংসাপত্র দেওয়ার বিনিময়ে মোট ২৮০০ টাকা দাবি করেন।
মঙ্গলবার অভিযোগকারীদের একজন অশোক ওরাং বলেন, ‘‘আমরা ওই সরকারি কর্মীকে বলি, আমাদের পারিবারিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিনি সোজা বলে দেন, আমরা বছরে ১২ হাজার টাকা ভাতা পাব। তা বলে ওই ক’টা টাকা তাঁকে দিতে আপত্তি কী?’’ রেণুপদ ওরাং, খোকন ওরাংরা জানান, শংসাপত্র আনতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা জানিয়েছিলেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়কে। তিনি প্রশাসনকে জানানোর পরামর্শ দেন। এর পরেই মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগকারী লোকশিল্পীরা জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের শংসাপত্র নিতে এলাকার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর কাছ থেকে।
যে কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই শংসাপত্রের বিষয়টি দেখার পাশপাশি পঞ্চায়েত সমিতি জমির চরিত্র বদলের জন্য যে কর নেয়, তারও দেখাশোনা করেন। কালনা ২ ব্লকের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘করের বিষয়টি নিয়েও ওই কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কত জমির চরিত্র বদল হয়েছে, তার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বার ব্লক প্রশাসনকে তথ্য জানার অধিকারে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে, জমির চরিত্র বদল অনুযায়ী সঠিক অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা পরেছে কিনা।’’ প্রণববাবু বলেন, ‘‘ওই সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে আসছে। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক।’’
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ওই কর্মীর দাবি, শংসাপত্র নিতে গেলে নিয়ম অনুযায়ী সশরীরে ব্লক অফিসে আসতে হয় লোকশিল্পীদের। কিন্তু, তাঁদের বেশির ভাগই না হাজির হয়ে শংসাপত্র দাবি করেছিলেন। ‘‘সে কারণেই শংসাপত্র না দিতে চাওয়ায় আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। অন্য অভিযোগেরও কোনও ভিত্তি নেই।’’—দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy