Advertisement
E-Paper

শিশু বদলের অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

ফের শিশু বদলের অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গত দশ বছরে এ নিয়ে পাঁচ বার এমন অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ঘটনায় হাসপাতাল মেনেও নিয়েছে গাফিলতি। তার পরেও যে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বদলায়নি তা ফের বোঝা গেল বৃহস্পতিবারের ঘটনায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪১
অভিযোগের পরে হাসপাতালের সামনে জটলা। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগের পরে হাসপাতালের সামনে জটলা। নিজস্ব চিত্র

ফের শিশু বদলের অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গত দশ বছরে এ নিয়ে পাঁচ বার এমন অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি ঘটনায় হাসপাতাল মেনেও নিয়েছে গাফিলতি। তার পরেও যে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বদলায়নি তা ফের বোঝা গেল বৃহস্পতিবারের ঘটনায়।

এ দিন পূর্বস্থলীর মেড়তলা গ্রামের বিশ্বজিৎ সূত্রধর অভিযোগ করেন, স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের পরে তাঁদের যে সদ্যজাতকে দেখানো হয় সেটি ছেলে সন্তান। তারপরে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। কিছুক্ষণ পরে যাকে দেওয়া হয় সেটি কন্যাসন্তান। হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। কন্যা সন্তানটিই তাঁধের হলে সেটাও উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে জানানোর দাবি করেছে ওই পরিবার। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সদ্যজাতের গায়ে লাগানো নম্বর ঠিকমত না দেখেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাতেই বিপত্তি। চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার সকালে মেড়তলার বিশ্বজিৎবাবু স্ত্রী ঝুম্পাদেবীকে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করান। ওই দিনই রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সিজার করে তাঁর একটি সন্তান হয়। ঝুম্পাদেবীর মা নমিতা পালের দাবি, সিজার হওয়ার পরে মেয়ের জ্ঞান ফিরতে সময় লাগে। তার আগে সদ্যজাত শিশুপুত্রকে তাঁর কোলেই দিয়ে যায় নার্সরা। আধ ঘণ্টা পরে নিয়েও যাওয়া হয় শিশুটিকে। নমিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘এর পরেই তাঁদের একটি কন্যা সন্তান দিয়ে বলা হয় এটিই তাঁর মেয়ের সন্তান। টিকিট ভুল হওয়ায় অন্য শিশু দেওয়া হয়েছিল।’’

এরপরেই ক্ষোভ জানায় ওই পরিবার। তাঁদের দাবি, হাসপাতাল তাঁদের ভুল বুঝিয়ে কন্যা সন্তান দিতে চাইছে। বিশ্বজিৎবাবু বুধবার রাতেই হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার বর্ধমান থানাতেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ করার পরেও হাসপাতালে তরফে কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। তাই পুলিশের কাছে গিয়েছি। সত্যি যদি মেয়েই হয়ে থাকে, তাহলে সেটাও উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে পরিষ্কার করে দেওয়া হোক।’’ সদ্যজাত কন্যাটি ঝুম্পাদেবীর কাছেই রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অস্ত্রোপচারের সময় কারা ছিলেন, প্রসূতি বিভাগের নার্সেরাই বা কী ভাবে টিকিট না দেখে শিশু তুলে দিলেন পরিবারের হাতে, সে সব খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

২০১৭ সালের মার্চেও একই অভিযোগ ওঠে হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সেই সময় বর্ধমানের মাধবডিহি থানার লোহাই গ্রামের গৃহবধু মধুমিতা খাঁ এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সদ্যোজাত শিশু পুত্রের শারীরিক সমস্যার কারণে তাকে প্রথমে শিশু বিভাগের এসএনসিইউতে ও পরে এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, এরপরে হাসপাতালের নার্সরা মধুমিতাদেবীকে মৃত শিশুপুত্র দেন। তিনি তা নিয়ে অস্বীকার করেন। পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, তাদের ছেলের ঠোঁটের উপরে একটি কালো দাগ ছিল। কিন্তু এই মৃত শিশুর তা নেই।

২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বরও শিশু বদলের অভিযোগ ওঠে। মেমারির তক্তিপুর গ্রামের আকাশি বেগম সদ্যজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে এসএনসিইউ-এ ভর্তি ছিলেন। তাঁর দাবি, মেয়ের জন্মের সময় ওজন ছিল ২.৫ কেজির বেশি। কিন্তু যাকে দেওয়া হয়েছে সে খুবই দুর্বল। নিতে চাননি তিনি। একই সময় বীরভূমের ইলামবাজারের এক গ্রাম থেকেও অভিযোগ আসে, তাঁদের সন্তান রোগা ছিল, কিন্তু হাসপাতাল যাকে দিয়েছে তার স্বাস্থ্য ভাল। তাঁরা দাবি করেন, জোর করে বাচ্চা দিয়েছে হাসপাতাল।

২০১১ সালের ২ জুলাই-এ বুদবুদের রূপা বাদ্যকর অভিযোগ করেন, তাঁকে প্রথমে ছেলেসন্তান দেওয়া হয়েছিল। আধ ঘণ্টা পরে মৃত কন্যা সন্তান দেওয়া হয়।

এর তিন বছর আগে মাধবডিহির ছোট বৈনান ও তালিতের দুই মা শিশু বদলের অভিযোগ করেন। বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। ডিএনএ পরীক্ষা করানোর পরে শিশু নিয়ে যান তাঁরা।

Burdwan Medical College Newborn
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy