Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Jitendra Tiwari

জিতেন্দ্রর পদত্যাগের সঙ্গে ‘নড়াচড়া’ দলে

আসানসোল পুরসভার মেয়াদ শেষের পরে, গত নভেম্বরে যে প্রশাসক বোর্ড তৈরি হয়েছিল, তার সদস্যদের বেশির ভাগই অবশ্য এ দিন এক যোগে জানান, তাঁরা তৃণমূলেই আছেন এবং আইনি সুযোগ থেকে থাকলে, তবে তাঁরা পুরসভার কাজও চালাবেন।

আসানসোল পুরসভায় প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছবি: পাপন চৌধুরী।

আসানসোল পুরসভায় প্রশাসক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছবি: পাপন চৌধুরী।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০৬
Share: Save:

পাঁচ বছর চেয়ারম্যান, পাঁচ বছর মেয়র এবং তার পরে কয়েকমাস পুর-প্রশাসক। আসানসোল পুরসভার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ‘আপাতত ইতি’ টানলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছাড়লেন জেলা সভাপতির পদ-সহ তৃণমূলও। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূলের অন্য নেতাদের কী অবস্থা, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মধ্যে।

জিতেন্দ্রবাবুর পুর-প্রশাসক এবং তৃণমূল ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই দল ও দুর্গাপুর পুরসভার সব পদ ছাড়েন ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনই দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) চেয়ারম্যান ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অন্যতম পরামর্শদাতার পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন দীপ্তাংশু চৌধুরীও। আসানসোল পুরসভার আইনি উপদেষ্টার পদ ছেড়েছেন রবিউল ইসলাম।

১৯৯৮-এ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত চন্দ্রশেখরবাবু এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘‘দিদির আত্মীয়দের তাঁর প্রতি আর ভরসা নেই। তাই বাইরে থেকে ভাড়াটে সংস্থা আনা হয়েছে। সংস্থাটি শেষ করে দিল দলটাকে।’’ পাশাপাশি, দুর্গাপুর পুরসভার একশো কোটি টাকার প্রকল্প রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আটকে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে, এর পরে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘যা হওয়ার হবে ১৯ ডিসেম্বর। সে দিন দাদার (শুভেন্দু অধিকারী)পাশে থাকব।’’

এ দিন চন্দ্রশেখরবাবু তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসনের বিরুদ্ধেও ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা কমিটির বৈঠকে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর সম্পর্কে কুকথা শুনতে হয়েছে ভি শিবদাসনের মুখে। দলের কোনও কর্মসূচিতে গেলেই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলে আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে। তাই স্বাধীন ভাবে মানুষের কাজ করতে পদত্যাগ করছি।’’

এ দিকে, সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও দীপ্তাংশুবাবু বলেন, ‘‘কেন সরকারি পদ থেকে সরে গিয়েছি, তা অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে আমি এখনও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্য।’’ পাশাপাশি, প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘এখনও তৃণমূলেই আছি। তবে দেশে একটাই রাজনৈতিকদল নেই।’’

তবে আসানসোল পুরসভার মেয়াদ শেষের পরে, গত নভেম্বরে যে প্রশাসক বোর্ড তৈরি হয়েছিল, তার সদস্যদের বেশির ভাগই অবশ্য এ দিন এক যোগে জানান, তাঁরা তৃণমূলেই আছেন এবং আইনি সুযোগ থেকে থাকলে, তবে তাঁরা পুরসভার কাজও চালাবেন। পুরসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রশাসক বোর্ডের সদস্য অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘জানি না, ভবিষ্যৎ কী হবে! তবে সংশ্লিষ্ট জায়গা কাজ চালাতে বলা হয়েছে। কাজ করছিও।’’ জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামী হিসেবে তৃণমূলের অন্দরে পরিচিত বোর্ডের অপর সদস্য পূর্ণশশী রায় বলেন, ‘‘আমি জল দফতরের কাজ দেখাশোনা করি। সেটা চালাচ্ছি এখনও।’’ বোর্ডের সদস্য দিব্যেন্দু ভগত, মীর হাসিমেরা জানান, প্রশাসক হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তা তাঁরা পালন করছেন। একই কথা জানান সরকার মনোনীত বোর্ডের সদস্য অশোক রুদ্রও।

এ দিনের নানা ঘটনাপ্রবাহ ও তাঁর বিরুদ্ধে চন্দ্রশেখরবাবুর তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘দল থেকে নানা ভাবে উপকৃত হওয়া নেতারাই দল ছাড়ছেন। শুভেন্দু অধিকারী এঁদের অন্যতম। এটাই আমি বৈঠকে বলেছি। এই সব নেতারা বেরিয়ে গেলে, দল মজবুত হবে বলেই আমি মনে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Asansol Corporation Jitendra Tiwari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE