জট: নির্মীয়মাণ উড়ালপুল চত্বর। ছবি: সুপ্রকাশ চৌধুরী
এক দিকে তিন বছর ধরে চলছে রেল উড়ালপুলের কাজ। আর এক দিকে দু’বছরেও শেষ হয়নি বর্ধমান শহরের ‘প্রাণভোমরা’ জিটি রোডের উন্নয়ন। মাঝখান থেকে রোজ মুশকিলে পড়ছেন শহরবাসী।
এর সঙ্গে রাস্তার দু’পাশে দখলদারদের উৎপাত, ফুটপাতে দোকান-বাজার, যানজট, এ সব তো রয়েছেই। শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বেশির ভাগ রাস্তার ধারে ডাঁই হয়ে রয়েছে বালি, সিমেন্ট। যাতায়াতের জায়গা ছোট হয়ে গিয়েছে। পিচ-পাথর ওঠা রাস্তায় প্রায় দিন ওই স্তুপে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সাইকেল, বাইক আরোহীরা। জিটি রোডের বেশ কিছু জায়গায় আলো না থাকায় সন্ধ্যায় আক্ষরিক অর্থেই প্রাণ হাতে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলেও তাঁদের দাবি। এ নিয়ে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের আশ্বাস, “মার্চের মধ্যে প্রথম দফার কাজ শেষ হবে বলে পূর্ত দফতর জানিয়েছে। আর রেলের উড়ালপুলের জন্য আগে চিঠি দিয়েছিলাম। তখন তাঁরা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই কাজ যে শেষ হবে না বোঝাই যাচ্ছে। ফের রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)-কে চিঠি দেব।’’ এ দিন পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র ভজন সরকারকে জিটি রোডে অস্থায়ী ভাবে আলো লাগানোর নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বাস মালিক সমিতির দাবি, উড়লপুলের কাজের জন্য গতি হারিয়েছে শহর। শহরের ভিতর কোনও নির্দিষ্ট বাসস্টপ না থাকায় কোনও যাত্রী হাত তুললেই বাস দাঁড়িয়ে পড়ছে। ফলে নবাবহাট থেকে উল্লাস মোড়, সাড়ে ৮ কিলোমিটার রাস্তা যেতে মিনি বাসের সময় লাগছে ৪৫ মিনিট। নবাবহাট থেকে পূর্তভবন যেতেও একই সময় লাগছে। এতে তাঁদের লোকসানের বোঝা বাড়ছে বলেও দাবি করছেন বর্ধমান শহরের মিনি বাস মালিক সমিতির সম্পাদক কাঞ্চন ঘোষ। যদিও বাসযাত্রীদের একাংশের দাবি, এত সময় লাগার কারণ পুলিশের তাড়া না খাওয়া পর্যন্ত এক-একটি বাস কার্জন গেট বা স্টেশনের মুখে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে। তাতে পুরো এলাকায় যানজটও হচ্ছে। অনেকে আবার বাস ছেড়ে টোটোয় উঠে পড়ছেন।
আবার টোটোর ভিড়েও ত্রাহি রব নবাবহাট বা উল্লাস মোড়ে। শহরের দুটি বাসস্ট্যান্ডের সামনেই জিটি রোড কার্যত দখল করে তৈরি হয়ে গিয়েছে টোটো স্ট্যান্ড। পুলিশ লাইন বাজার উঠে এসেছে জিটি রোডের উপর। এমনকি, রাস্তা চওড়া করার পরে নতুন করে তৈরি হওয়া ফুটপাতও দখল হয়ে গিয়েছে। অনেকে আবার অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে ‘দখলে’র নিশান রেখে দিয়েছেন।
এ দিকে রেল উড়ালপুলের সংযোগকারী রাস্তার কাজও শেষ হয়নি। উড়ালপুলের চার ধারে, বর্ধমান পুরসভা, মেহেদিবাগান, জেলাশাসকের দফতর ও ও কাটোয়া রোডের দিকের সংযোগকারী রাস্তার কাজ গত তিন বছর ধরে চলছেই। এরই মধ্যে উড়ালপুলের নীচে ফাঁকা জায়গা ‘দখল’ করতে শুরু করে দিয়েছেন স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ীরা। বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা পরিকল্পনা করছে, দখলদার ‘ঠেকানোর’ জন্য উড়ালপুলের নীচে সৌন্দর্যায়ন করা হবে। অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে হাট বসানো হবে। জেলাশাসকও জানিয়েছেন, বিস্তারিত পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। কিন্তু যতক্ষণ না মূল কাজ শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ সব শিকেয়।
উড়ালপুল তৈরির দায়িত্বে থাকা আরভিএনএলের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র হায়দার আলি বলেন, ‘‘আমরা এই আর্থিক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। আসলে প্রচন্ড গাড়ির চাপ থাকায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রেখে ধীরে সুস্থে কাজ করতে হচ্ছে।’’
ততদিন হাঁসফাঁস করে পথ চলাই নিয়তি শহরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy