মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা সংক্রমণ রুখতে সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করতে বার বার বলছেন। তার পরেও বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ায় একটি মেলা (প্রশাসনের দাবি, অনুমতিবিহীন) উদ্বোধন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এক তৃণমূল কাউন্সিলর। অধমবাবা শ্মশান কালীমন্দির প্রাঙ্গণে বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে চার দিনের মেলা। উদ্বোধক আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক।
যে কোনও রকম জমায়েতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে, এ কথা বারবার বলছে স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেও মেলার আয়োজন কেন? অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘এ বার মেলার প্রচার করা হয়নি। তাই ভিড় হবে না বলে মেলা কমিটি আমাকে জানিয়েছে। তা ছাড়া, যখন মেলার উদ্বোধন করি তখন মাত্র ১৫ জন লোক ছিল।’’ তবে পরের দিকে একশোর বেশি লোক হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। মেলা কমিটির সম্পাদক নরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বিডিওর (জামুড়িয়া) অনুমতি নিয়ে মেলার আয়োজন করেছি।’’ বিডিও কৃশাণু রায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মেলা কমিটি জানিয়েছিল, তারা এ বার মেলার আয়োজন করবে না। তাই অনুমতির প্রশ্নই ওঠে না। খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাব।’’ অণ্ডালের খাসকাজোড়াতেও গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ভাগবতকথা পাঠের আসর। উদ্যোক্তা তথা জেলা পরিষদের সদস্য বিষ্ণু নুনিয়ার দাবি, “রবিবার এই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অনুরোধে বন্ধ করা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা বার বার সকলকে সচেতন করছি। বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্ব দেখছেন।’’
বৃহস্পতিবার শ্রীপুরে জামুড়িয়া ১ ব্লক কংগ্রেসের কর্মিসভা হয়। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, শ’খানেক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনও বিধি মানা হয়নি বলে সূত্রের খবর। যদিও দলের জেলা সভাপতি তরুণ রায়ের দাবি, করোনার কথা মাথায় রেখে বেশি কর্মীকে ডাকা হয়নি। ৫০ জনের বেশি লোক হয়নি।
অণ্ডালের পরাশকোলেও বুধবার সন্ধ্যায় ভক্তিগীতি আয়োজিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন এই আয়োজন? উত্তর মেলেনি আয়োজকদের কাছ থেকে।
এ দিন ডিসেরগড়ে পীরবাবার মাজারে ‘স্নান-উৎসব’ পালিত হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, তা উপলক্ষে প্রায় দশ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন দামোদরের পাড়ে। সরকারের তরফে প্রচারের পরেও এই জমায়েত কেন? উৎসব কমিটির সদস্য চেঙ্গিস খান বলেন, ‘‘৪০০ বছর ধরে এই উৎসব হয়ে আসছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আজ, শুক্রবার মেডিক্যাল টিম থাকবে।’’
তবে অন্য ছবি কুলটির মিঠানি গ্রামে। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বসে মেলাও। উৎসব কমিটির কর্ণধার রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উৎসব হবে। তবে মেলা বাতিল হয়েছে। উৎসবে আসা জনতাকে ‘স্যানিটাইজ়ার’, ‘মাস্ক’ দেওয়া হবে।’’
পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘কোথাও যেন ভিড় না হয় সে জন্য পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে।’’ তার পরেও জমায়েত রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ১৪৪ ধারা জারি হয়নি। তাই কোনও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস হালদারের তবে পরামর্শ, ‘‘যতটা সম্ভব কম জমায়েত হওয়াই এখন বাঞ্ছনীয়।’’