করোনা-ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে শনিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠক করেছে। সেখান থেকে এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই ভাইরাসের হামলা ঠেকাতে কী-কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা নিয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে, সিঙ্গাপুর ফেরত দুর্গাপুরের গোপালপুরের এক যুবকের বাড়িতে যান স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। তবে এ পর্যন্ত জেলায় করোনা-আক্রান্ত রোগী নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এ দিন জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠির উপস্থিতিতে হওয়া ওই বৈঠকে প্রশাসনের নানা স্তরের কর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি এবং আসানসোল, দুর্গাপুরের বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। বৈঠক শেষে জেলাশাসক বলেন, ‘‘এই সময়ে বিদেশ থেকে যাঁরা দেশে ফিরেছেন, তাঁদের দিকে স্বাস্থ্য দফতর বাড়তি নজর রাখছে। চিন বা সিঙ্গাপুর থেকে কেউ দেশে ফিরলে তাঁদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা বিস্তারিত ভাবে প্রশাসনের কাছে রাখা এবং তাঁদের উপরে নজরদারি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর নজরদারি চালাচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি একটি বেসরকারি সিমেন্ট কারখানার কর্মী, দুর্গাপুরের গোপালপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বিল্টু ঘোষ সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি ফেরেন। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তার পরেও আগাম সতর্কতা হিসেবে এ দিন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের (কাঁকসা) দু’জন কর্মী তাঁর বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর করেন। কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। ওই যুবক জানান, গত দু’সপ্তাহ ধরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি পরিবারের বাকিদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। বিএমওএইচ (কাঁকসা) বিপ্লব মণ্ডল বলেন, ‘‘সিঙ্গাপুর থেকে ওই যুবক ১৪ দিন আগে ফিরেছেন। তিনি সুস্থ।’’
যা পদক্ষেপ
• বিদেশ থেকে যাঁরা দেশে ফিরেছেন, তাঁদের দিকে স্বাস্থ্য দফতর বাড়তি নজর রাখছে। চিন বা সিঙ্গাপুর থেকে কেউ দেশে ফিরলে তাঁদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা বিস্তারিত ভাবে প্রশাসনের কাছে রাখা এবং তাঁদের উপরে নজরদারি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
• জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর নজরদারি চালাচ্ছে।
• আসানসোল জেলা হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
• লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার দিয়ে যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা প্রচার করা হবে।
পাশাপাশি, রাশিয়া থেকে এক তরুণী দিন চারেক আগে দুর্গাপুরের গোপালপুরে গৌতম ব্রহ্মের বাড়িতে এসেছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর বাড়িতে যান। গৌতমবাবু জানান, রাশিয়ান মেয়েটি শনিবার সকালেই মায়াপুর চলে গিয়েছেন। গৌতমবাবু স্বাস্থ্যকর্মীদের জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে ওই মেয়েটির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা হয়েছে। তিনি ফিরে এলে স্বাস্থ্যকর্মীদের খবর দেওয়া হবে।
তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আসানসোল জেলা হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’ খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) দেবাশিস হালদার। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে চারটি শয্যা বিশিষ্ট পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দু’টি পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড বানানো হচ্ছে বলে জানান সুপার নিখিলচন্দ্র দাস।
পাশাপাশি, জন-সচেতনতা প্রচারেও পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। দেবাশিসবাবুর পরামর্শ, ‘‘কারও হাঁচি, কাশি হলে তাঁর থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। চোখে, মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। জ্বর হলে ‘প্যারাসিটামল’ খেতে হবে।’’
জেলা প্রশাসন জানায়, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার দিয়ে যাবতীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা প্রচার করা হবে। আসানসোল পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পুরসভার পক্ষ থেকে ১০৬টি ওয়ার্ডে প্রচার অভিযানের কাজ শুরু করা হয়েছে।