দেশ-রাজ্য জুড়ে করোনার আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে মানুষজনকে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর, হালকা সর্দি-কাশিতে ভুগতে থাকা এক যুবকের মৃত্যুর পরে, বাড়িতেই তাঁর দেহ পড়ে রইল প্রায় ১৮ ঘণ্টা। ঘটনাস্থল পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের উখড়া পঞ্চায়েতের শফিকনগর। পরে, বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রশাসনের তরফে দেহ উদ্ধার করে তা সৎকারের ব্যবস্থা হয়। প্রশাসনের দাবি, সৎকারের আগে, চিকিৎসকেরা দেহ পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, লক্ষীন্দর সিংহ (৩৭) নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষীন্দরবাবুর পনেরো বছরের ছেলে ও বারো বছরের মেয়ে আছে। উখড়া বাজারে তিনি আনাজ ফেরি করতেন। কয়েকদিন ধরে তিনি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন। পড়শিরা জানান, লক্ষীন্দরবাবুর মৃত্যুর খবর তাঁরা শুক্রবার ভোরে জানতে পারেন। মৃতের স্ত্রী কমলজিৎ কউর দাবি করেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ স্বামীকে জল খাওয়াতে গিয়ে বুঝতে পারি, উনি আর নেই। তার পরে দুই আত্মীয়কে ফোন করে বিষয়টি জানালেও তাঁরা কেউ আসেননি। আর করোনায় মৃত্যু ভেবে কেউ আসবেন না, আঁচ করে প্রতিবেশীদের কিছু জানাইনি।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার ভোরে বিষয়টি জানাজানি হয়। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অর্ঘ্যপ্রসূন কাজি জানান, এ দিন সকালে তিনি স্থানীয় সূত্রে এমন ঘটনার কথা জানতে পেরে বিডিওকে (অণ্ডাল) বিষয়টি জানান। বিডিও দেহ উদ্ধার করে সৎকারের ব্যবস্থা করেন। বিডিও সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ ব্লক প্রশাসন, পুলিশ ও সব স্তরের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। তার আগে, চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উখড়ার প্রতিনিধি স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বিডিও-র কাছ থেকে ফোনে বিষয়টি জানতে পেরে সকালে এক জন স্থানীয় চিকিৎসককে নিয়ে লক্ষীন্দরবাবুর বাড়ি যাই। দেখি, বাড়ির ভিতরে বিছানায় শোয়ানো রয়েছে লক্ষীন্দরবাবুকে। চিকিৎসক পরীক্ষা করার পরে তাঁকে মৃত বলে জানান।’’
মৃতের শ্যালক বার্নপুরের বাসিন্দা রবীন্দ্র সিংহ শ্মশানে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রবাবুর দাবি, তাঁর জামাইবাবু ছ’দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বুধবার তিনি তাঁকে দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষীন্দর তা শুনতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘জামাইবাবু ভেবেছিলেন, স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে ওষুধ খেলেই সুস্থ হবেন। শেষ পর্যন্ত তা হল না। তাই সকলের কাছে আমার আবেদন, কোনও রকম শরীর খারাপ হলে ঠিক জায়গায় চিকিৎসা করান। এতে এমন ঘটনা না-ও ঘটতে পারে।”