অগস্টের শেষ দিকে আয়োজিত ‘ভার্চুয়াল’ প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমানে করোনা সংক্রমণের হার (অর্থাৎ, জেলায় একশো জনের পরীক্ষায় কত জন সংক্রমিত) পাঁচের নীচে নামছে না কেন, তা জানতে চেয়েছিলেন। তার পরে বেশ কিছুটা সময় কেটে গেলেও সেই হার টানা পাঁচের নীচে থাকছে না বলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ অগস্ট পর্যন্ত এই জেলায় সংক্রমণের হার ৮.৩১ শতাংশ ছিল। মৃত্যু হার ২.৮ শতাংশ থেকে কমে ১.২৩ শতাংশ হয়েছে। আশার কথা, সেই সময়ের তুলনায় সুস্থতার হার ৬৫-৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির কোঅর্ডিনেটর চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু জানান, শুক্রবার সংক্রমণের হার ছিল ৬ শতাংশের আশপাশে।
জেলায় করোনা
মোট আক্রান্ত
৭,৩০৩
অ্যাক্টিভ রোগী: ৭৯২
এখনও পর্যন্ত সুস্থ: ৬,৪৪৪
মৃত: ৬৭
**শুক্রবার প্রকাশিত বুলেটিন। হিসেব ১ অক্টোবর পর্যন্ত।
(সূত্র: রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর)
কেন পাঁচ শতাংশের নীচে নামছে না এই হার? এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে না চাইলেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী মাজি বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে। তাতেই সংক্রমণের হার কমছে।’’ তবে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “গত প্রায় কুড়ি দিন ধরে সংক্রমণের হার কমছে। গত ১৫ দিন সংক্রমণের হার ছিল ৪.১২ শতাংশ ছিল। কয়েকদিনে তা কিছুটা বেড়েছে। আগামী দিনে যাতে তা না বাড়ে, সে জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে একটি লিখিত রিপোর্ট পাঠাচ্ছি।’’ সমরেন্দ্রবাবুর মতে, প্রশাসন চেষ্টা করলেও জনসাধারণের সচেতনতার অভাবই এর জন্য দায়ী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাস্তাঘাটে সামাজিক দূরত্ব-বিধি প্রায় কেউই মানছেন না। অনেকে ‘মাস্ক’ পরছেন নএ দিকে, সংক্রমণের হারে লাগাম টানতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য-কর্তা এবং কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যেরা। সেগুলির অন্যতম— স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলির সমন্বয় অনেকটা বাড়ানো। কোভিড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব মেটাতে ‘র্যাপিড রেসপেন্স টিম’ তৈরি করা। কোনও সংক্রমিত রোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রয়োজন বুঝলে ‘সেফ হোম’-এ রাখা হচ্ছে। বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকা রোগীদের অনলাইনে ও প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রতিটি হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি, অথচ, ‘সম্ভাব্য’ রোগীদের জন্য জেলার প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ‘সারি’ ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার জন্য কিছু শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানেও ‘মনিটারিং টিম’ কোভিড-চিকিৎসার খরচ বেঁধে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কর্তারা সংক্রমণের হার দ্রুতই কমবে বলে আশা করছেন। পাশাপাশি, সচেতনতা প্রচারেও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।