Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
lockdown health

লকডাউনে প্রসব কম, ধন্দ কারণে

পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছে। কোন কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সংখ্যা তুলনায় বেশি কমেছে, তার বিশদ তথ্য অনুসন্ধানের জন্য জেলাগুলিকে বলা হয়েছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২০ ০০:২৩
Share: Save:

প্রতি মাসে কত প্রসব হচ্ছে, হিসেব রাখে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। লকডাউনের সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রসবের সেই হিসেব দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য-কর্তাদের। তাঁদের দাবি, সাধারণত প্রসবের সংখ্যায় বিশেষ পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু এ বার মার্চ থেকে জুনের মধ্যে জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বেশ কিছুটা কমেছে। সে ক্ষেত্রে বাকি প্রসব কোথায় হল, প্রসূতিরা কোথা থেকে পরিষেবা নিলেন— এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য-কর্তাদের।

পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেছে। কোন কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সংখ্যা তুলনায় বেশি কমেছে, তার বিশদ তথ্য অনুসন্ধানের জন্য জেলাগুলিকে বলা হয়েছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলামের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিচ্ছি। তবে লকডাউনের গোড়ার দিকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কম হলেও এখন সংখ্যাটা বাড়তে শুরু করেছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালের পাশাপাশি, জেলার গ্রামীণ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির প্রায় সব জায়গাতেই ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরে এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে প্রসবের সংখ্যা অনেক কমেছে। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে গত বছর এই সময়ে যত প্রসব হয়েছিল, এ বার তার তুলনায় ৬৫% প্রসব কম হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রসবের জন্য সব অন্তঃসত্ত্বা সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি। লকডাউনের জন্য যানবাহনের সমস্যা, করোনা-আতঙ্কে হাসপাতাল এড়ানোর চেষ্টা এর কারণ হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। অ্যাম্বুল্যান্স পেতে সমস্যাও কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা জনস্বাস্থ্য গবেষক অরিন্দম রায়ের দাবি, ‘‘সাধারণের মনে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দৈনন্দিন চিকিৎসা হচ্ছে না। করোনা নিয়ে আতঙ্কে সচেতন ভাবে অনেকে হাসপাতাল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ১০২ নম্বর ডায়াল করে অ্যাম্বুল্যান্স পেতে দেরি হওয়ার ঘটনা।’’ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও মানছেন, ১০২ ডায়ালের অ্যাম্বুল্যান্সের একটি বড় অংশ এই সময়ে করোনা-সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে তার সুবিধা প্রসূতিরা পাননি।

করোনা-পরিস্থিতিতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল এবং বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তির উপরে নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছিল। গ্রামীণ বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। গত কয়েকমাসে নানা নার্সিংহোমও বন্ধ ছিল। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বছরে প্রায় ৬৫ হাজার প্রসব হয়। তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ। সেখানে এ বার বাড়িতে দাইয়ের সাহায্যে বা বেআইনি ক্লিনিকের দ্বারস্থ হয়ে প্রসব করানো হয়েছে কি না, উঠছে সে প্রশ্ন।

কোথায় কত প্রসব

যদিও তা মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর। নানা ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, সরকারি যানবাহনের অভাব কার্যত ছিল না। মাত্র দু’টি ক্ষেত্রে বাড়িতে প্রসব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাহলে সংখ্যা কমল কেন? প্রাথমিক ভাবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের ধারণা, লাগোয়া নানা জেলা থেকে প্রসবের জন্য অন্তঃসত্ত্বাদের পূর্ব বর্ধমানের নানা হাসপাতালে আনা হয়। লকডাউন চলায় বা করোনা-আতঙ্কে এ বার সেই সংখ্যা কমেছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘তুলনামূলক ভাবে প্রসব কম হয়েছে। বাকি প্রসূতিরা কোথায় গেলেন, তা আমরাও জানার চেষ্টা করছি। সার্বিক স্বাস্থ্য সূচকের জন্য তা জানা খুব জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Baby Coronavirus Lockdown Burdwan Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE