Advertisement
E-Paper

CPIM-TMC: পতাকা উত্তোলনে বিতর্ক না ডাকতেও বিধায়ক? দাবির লড়াই

জেলার রাজনীতিতে মূলত ১৯৯৮ থেকে পাণ্ডবেশ্বর বাম-দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৮:১৯
নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

ব্যবধান ২৪ ঘণ্টার। স্বাধীনতা দিবসের দিন, সোমবার পাণ্ডবেশ্বরের নবগ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পতাকা তোলার বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক সৌজন্য’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার ওই ঘটনাকে ‘বিনা আমন্ত্রণে বিধায়কের কার্যালয়ে প্রবেশ’ বলে দেগে দিলেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। পাশাপাশি, ঘটনাটির পরে, পাণ্ডবেশ্বরে সিপিএমের সংগঠনের পরিস্থিতি কী, সে পরিস্থিতির জন্য নরেন্দ্রনাথ কতটা দায়ী— এ প্রশ্নগুলিও উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

নরেন্দ্রনাথ সোমবার দাবি করেছিলেন, স্বাধীনতা দিবসের মতো শুভ দিনে রাজনৈতিক রং না দেখে, সিপিএম কর্মীদের অনুরোধে তাঁদের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার এলাকার স্থানীয় সিপিএম নেতা কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় জানান, নরেন্দ্রনাথ তাঁর দাদার স্কুলের বন্ধু। সে সূত্রে পরিচিত। কাঞ্চনের দাবি, “দলীয় কার্যালয়ে খুঁটিতে পতাকা বেঁধে কয়েক জন সমর্থকের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বিধায়ক আচমকা কার্যালয়ে ঢুকে পতাকা তোলা হয়নি কেন জানতে চান। পরে, নিজেই বলেন, ‘আমি তুলে দিচ্ছি’। আমি বলি, ‘দাদা, আমাদের কার্যালয়ে তুমি কেন পতাকা তুলবে।’ বিধায়ক জানান, স্বাধীনতা দিবসে রাজনীতির ভেদাভেদ থাকে না। আমাকে ‘ভাইয়ের মতো’ বলেন ও পতাকা তুলে দেন।” কাঞ্চনের দাবি, বিধায়ক বলে তাঁরা বাধা দিতে পারেননি নরেন্দ্রনাথকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “বিনা আমন্ত্রণে কার্যালয়ে ঢুকে বিধায়ক অন্যায় করেছেন। উনি বিধায়ক বলেই আমাদের কর্মীরা ওঁকে বাধা দিতে পারেননি।”

কিন্তু ‘বাধা না দিতে পারার’ প্রসঙ্গটি সামনে আসতেই, পাণ্ডবেশ্বরে সিপিএমের সংগঠনের হাল কী, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। জেলার রাজনীতিতে মূলত ১৯৯৮ থেকে পাণ্ডবেশ্বর বাম-দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে, পরিবর্তনের হাওয়াতেও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা থেকে প্রায় আট হাজার ভোটে জিতেছিলেন সিপিএমের গৌরাঙ্গ। কিন্তু তার পরে থেকেই ভোট-বাক্সে সিপিএমের রক্তক্ষরণের শুরু। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে পাণ্ডবেশ্বর থেকে সিপিএম অস্তিত্বহীন হতে শুরু করে। ২০১৬-য় সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো ভোটে তৃণমূলের কাছে হারে সিপিএম। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি তারা। ২০২১-র বিধানসভা ভোটে তৃতীয় স্থান পায় সিপিএম। ভোট-বাক্সের এমন হাল দেখে, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, এলাকায় সিপিএমের সংগঠন কার্যত ভেঙে গিয়েছে। যদিও, সিপিএম নেতৃত্ব এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন, দু’দশকের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা বর্তমান বিধায়ক নরেন্দ্রনাথকেই! সিপিএমের অভিযোগ, ২০১১-র পরে থেকে নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা চালানো হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর মণ্ডলের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার বছরখানেকের মধ্যেই নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে পাণ্ডবেশ্বরের পরাশকোল, জামবাদ কোলিয়ারি এলাকা-সহ নানা স্থানে আটটি সিটু (সিএমএসআই) কার্যালয় দখল, পাণ্ডবেশ্বরে সিপিএম কার্যালয়ে আগুন ধরানোর ঘটনা আছে। ঘটনাচক্রে, এলাকায় সিপিএমের সংগঠনের মূল ভিত্তি ছিল এই শ্রমিক সংগঠন। নরেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ছোড়ায় সিপিএমের শাখা কার্যালয় দখল করে নৃত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর অভিযোগও রয়েছে! ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী সুভাষ বাউড়ির অভিযোগ, “আমাকে ও দলের অনেককে মিথ্যা মামলায়ফাঁসিয়েছেন বিধায়ক।” অভিযোগের পরেও প্রশ্ন উঠছে, ‘প্রতিরোধ’ করা গেল না কেন? একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, এলাকায় সিটুর প্রভাব কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। যদিও, এক সিটু নেতার দাবি, “সংগঠন ঠিকই আছে। বিধায়ক সবটাই করেছেন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে। তা না হলে, এখনও তৃণমূল আমাদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে না।”

কিন্তু আগামী পঞ্চায়েত ভোটে নরেন্দ্রনাথের থেকে ‘রাজনৈতিক-সৌজন্য’ আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। যদিও নরেন্দ্রনাথ বলছেন, “আমি সবার বিধায়ক। সিপিএমের লোকজন অনুরোধ করায় পতাকা তুলেছি। রাজনৈতিক রং দেখিনি। সন্ত্রাসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি সবসময়ই, সৌজন্য বজায় রাখি।”

Asansol TMC CPIM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy