Advertisement
E-Paper

ঝোঁক ইংরেজি মাধ্যমে, ফাঁকা প্রাথমিক স্কুল

বছর-বছর কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। হাল এমন দাঁড়িয়েছে যে ক্লাস চালু রাখাই মুশকিল, দাবি কালনা-কাটোয়ার অনেক প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের। কেন এই পরিস্থিতি, কী ভাবছে প্রশাসন— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।বছর-বছর কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। হাল এমন দাঁড়িয়েছে যে ক্লাস চালু রাখাই মুশকিল, দাবি কালনা-কাটোয়ার অনেক প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের। কেন এই পরিস্থিতি, কী ভাবছে প্রশাসন— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৫
— ফাইল চিত্র।

— ফাইল চিত্র।

শুধু শহর নয়, অনেক গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারাও বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি স্কুল পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের সেখানে ভর্তি করার প্রবণতা বেড়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। সে কারণেই সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ। এখনও কোনও ব্যবস্থা না নিলে স্কুল চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হবে বলেও তাঁদের দাবি। অভিভাবকদের অনেকে আবার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

পড়ুয়া সংখ্যা দশের নীচে চলে যাওয়ায় কালনায় পাঁচটি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। শুধু কালনার ওই স্কুলগুলি নয়, জেলার অনেক প্রাথমিক স্কুলেই ছবিটা এই রকম। তার জেরে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কাটোয়ার শিক্ষক অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য, শিক্ষিকা নিবেদিতা মিশ্রদের কথায়, ‘‘প্রাথমিকের পাঁচটি শ্রেণিতে পাঁচ রকম বই। ছাত্রছাত্রী কম থাকলে এক ঘরে একই সঙ্গে পাঁচ শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। তাতে প্রত্যেক শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রতি আলাদা ভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’

শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, মিড-ডে মিলের জন্য পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ ৪ টাকা ১৩ পয়সা। স্কুলে জনা কুড়ি বা তারও কম পড়ুয়া থাকলে এত অল্প বরাদ্দ রান্নার জ্বালানি কিনতেই খরচ হয়ে যায়। ফলে, নিম্নমানের খাবার পায় খুদেরা। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কাটোয়া পশ্চিম চক্র শাখার সম্পাদক পরাশর দত্তের বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়া সংখ্যা খুব কম, এই রকম একাধিক স্কুলকে এক ছাদের তলায় আনলে পঠনপাঠন-সহ নানা সমস্যা অনেকটা মিটবে।’’

তবে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়াশোনার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেক অভিভাবকের মনে। কালনার শহরের বাসিন্দা কমল মজুমদারের যেমন অভিযোগ, ‘‘সরকারি অনেক স্কুলেই পড়াশোনার মান ভাল নয়। দুপুরে মিড-ডে মিল খাওয়াতেও যথেষ্ট সময় যায়। তাতে আসল উদ্দেশ্যে ফাঁক থেকে যায়।’’ অনেক অবিভাবকের দাবি, বেসরকারি মাধ্যম স্কুলে ইংরেজিতে ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বাড়ছে। তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে তাঁদের ধারণা। সে কারণেই ওই সব স্কুল বেছে নিচ্ছেন ছেলেমেয়েদের জন্য, জানাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, যে সব সরকারি স্কুলে ভাল পড়াশোনা হয় সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক পড়ুয়া রয়েছে। যেমন, কালনা শহরেরই বেশ কিছু স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা দু’শোর বেশি। তার মধ্যে একটিতে সেই সংখ্যা প্রায় ছ’শো।

যে সব স্কুলে পড়ুয়া বেশ কম, সেগুলির ভবিষ্যৎ কী? কাটোয়া মহকুমা স্কুল পরিদর্শক শেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘আচমকা কোনও স্কুল তুলে দেওয়া যায় না। এক জন ছাত্র থাকলেও স্কুল বন্ধ করা মুশকিল। তবে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলছে।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিশ ঢালিও বলেন, ‘‘শহরের যে সমস্ত স্কুলে পড়ুয়া-সংখ্যা অত্যন্ত কমে গিয়েছে, সেগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অচিন্ত্য চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা চল্লিশের কম, সেগুলির তালিকা ইতিমধ্যে শিক্ষা দফতরে পৌঁছেছে। দফতর অনুমতি দিলেই স্কুল সংযুক্তির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’’ স্কুল ছাত্র কেন কমছে, তা খতিয়ে দেখতে স্কুল পরিদর্শক ও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক চলছে বলেও জানান তিনি।

(‌শেষ)

Education School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy