ফাইল চিত্র
রাত ১টা। কাঁধে বন্দুক নিয়ে টহল দিচ্ছেন এক সিআইএসএফ জওয়ান। আচমকা ‘সার্চ লাইট’-এর আলোয় দেখলেন, দু’-আড়াইশো মিটার দূরে ঝোপের মধ্যে ঘাপটি মেরে হলুদ রঙের কী যেন একটা বসে। মুহূর্তে মনে হল, বাঘ নয় তো! দ্রুত ছুটে সহকর্মীদের বিষয়টা জানাতেই শুরু তল্লাশি। ধীরে ধীরে কয়েকশো বাসিন্দাও হাজির। বুধবার সকালে একটা বড় সময় ধরে এমন দৃশ্যের সাক্ষী রইল দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) ‘সেন্ট্রাল স্টোর’ চত্বর। বন দফতর অবশ্য জানায়, প্রাণীটি বাঘ নয়। তবে বনবেড়াল হলেও হতে পারে।
ডিএসপি সূত্রে জানা যায়, গুদামঘরটি রয়েছে বেনাচিতির প্রান্তিকা এলাকায়। ওই চত্বরে জঙ্গলও রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ওই জওয়ান বিষয়টি জানাতেই তাঁর সহকর্মীরা তল্লাশির পাশাপাশি, দূর থেকেই ছবি, ভিডিয়ো করেন। সেই ছবি, ভিডিয়ো (সত্যাসত্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার) সময় গড়াতেই ছড়িয়ে পড়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়। রটে যায়, ‘গুদামে বাঘ বেরিয়েছে।’
এর পরে, বুধবার সকাল থেকে লোকজন ভিড় জমাতে শুরু করেন গুদামঘরের আশপাশে। খবর পেয়ে বন দফতরের রেঞ্জার (দুর্গাপুর) দীপককুমার দত্তের নেতৃত্বে বনকর্মীরাও চলে আসেন। বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশি, নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন বনকর্মীরা। তাঁরা জানান, নখের আঁচড়, পায়ের ছাপ মিলেছে। রেঞ্জার বলেন, ‘‘লোকজন ভেবেছিলেন, বাঘ বেরিয়েছিল। আমরা নমুনা পরীক্ষা করে বাঘের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ পাইনি। নমুনা দেখে মনে হচ্ছে, প্রাণীটি বনবেড়াল ছিল।’’
নমুনা সংগ্রহের কাজ করার সময়ে বনকর্মীরাও চর্চা করছিলেন, এই এলাকায় কোনও ভাবেই বাঘ বেরোতে পারে না। কারণ, অদূরেই রয়েছে বেনাচিতি বাজার-সহ ঘন জনবসতি। ফলে, কোনও ভাবেই বাঘ আসার সম্ভাবনা এখানে নেই।
কিন্তু সম্ভাবনা না থাকলেও ‘ব্যাঘ্র-সংবাদের’ প্রভাব যে ভালই, তা টের পেয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও। স্থানীয় মাছ বাজারের বিক্রেতা পল্টু ধীবর বলেন, ‘‘বাজারে শুনলাম, বাঘ বেরিয়েছে। মাছ বিক্রি ফেলে উঠে এসেছি। তবে কিছুক্ষণ পরে মনে হয়, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।’’ ডিএসপি টাউনশিপের এ জোনের মহম্মদ আক্রম বলেন, ‘‘এক বন্ধু হোয়াটস অ্যাপে একটা ভিডিয়ো পাঠান। সেটায় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কৌতূহলের কারণে এখানে এসেছি।’’
‘কৌতূহল’ মিটতেই ভিড় অবশ্য ফাঁকা হয়ে যায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিএফও-র কাছ থেকে জেনেছি, ওটা বনবেড়াল ছাড়া কিছু না। অযথা অতঙ্ক ও গুজব না ছড়ানোর জন্য আর্জি জানানো হয়েছে সবাইকে।’’ সিআইএসএফ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়নি এলাকার নিরাপত্তার কথা ভেবেই। তল্লাশি চালানো হলেও বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি। ওই এলাকায় অন্তত দশ জন বন্দুক কাঁধে টহল দেন।
পাশাপাশি, পরিবেশকর্মীরা বন্যপ্রাণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, সম্প্রতি বাঘ সন্দেহে বাঘরোল পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছিল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। তাঁদের আর্জি, বাঘ বা অন্য বন্যপ্রাণী, এলাকায় তেমন কিছু দেখলে দ্রুত প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy