Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পাতে ফিরতে পারে দুর্গাশাল, রাঁধুনি-পাগল

রাঁধুনি পাগল, কামিনী ভোগ, ইন্দ্রাণী ভোগ কিংবা কবিরাজি শাল, দুর্গাশাল, কালো মুনিয়া— পঞ্চাশ বছর আগেও বাজার কাঁপাত এই সব ধান। স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয় ধানের চাহিদাও ছিল তুঙ্গে। তবে সবুজ বিপ্লবের পরে ফলন বাড়ানোর জন্য বোরো চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে চাষিরা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যান ওই ধানেরাও।

চলছে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির ধান চাষ। নিজস্ব চিত্র।

চলছে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির ধান চাষ। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

রাঁধুনি পাগল, কামিনী ভোগ, ইন্দ্রাণী ভোগ কিংবা কবিরাজি শাল, দুর্গাশাল, কালো মুনিয়া— পঞ্চাশ বছর আগেও বাজার কাঁপাত এই সব ধান। স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয় ধানের চাহিদাও ছিল তুঙ্গে। তবে সবুজ বিপ্লবের পরে ফলন বাড়ানোর জন্য বোরো চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে চাষিরা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যান ওই ধানেরাও।

তবে এ বার বিভিন্ন প্রজাতি দেশি ধান ফিরিয়ে আনতে চাইছে কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধমান ক্যাম্পাস। কৃষি বিজ্ঞানীরা ক্যাম্পাসের ভিতর প্রায় তিন একর জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে তিনশো রকম প্রজাতির ধান চাষ শুরুও করেছেন। তাঁদের দাবি, ওই সব প্রজাতির ধান চাষ করে উৎপাদনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ভাগীরথী-দামোদর অববাহিকায় ওই সব প্রজাতির ধান পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে বাড়তে পারছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ওই ধান চাষে চাষিরা উৎসাহ হারিয়েছেন কেন, সে উত্তরও এ বার মিলতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। পাশাপাশি উৎপাদিত ধান সংরক্ষণ করা হলে পরবর্তী সময়ে গবেষণামূলক কাজে বা নতুন জাতের ধান তৈরিতে তা ব্যবহার করা যাবে বলেও বিজ্ঞানীদের দাবি। এ র সঙ্গে হারানো ধান পাতে ফিরে আসতে পারে বলেও আশা করছেন অনেকে। বিসিকেভির বর্ধমান ক্যাম্পাসের অ্যাসোসিয়েট ডিন সঞ্জয় দত্ত রায় বলেন, ‘‘পুরাতত্ত্বকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেমন সংরক্ষণ করা হয়, সেই ভাবেই হারানো ধান সংরক্ষণ করা হবে।’’

বিসিকেভির বর্ধমান ক্যাম্পাসটি বছর দু’য়েক আগে চালু হয়েছে। তারপর থেকেই শিক্ষকেরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কৃষক পরিবারের কাছ থেকে নানা রকম ধান সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়াও বিসিকেভির বংশগতি ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক সোমনাথ ভট্টাচার্যের কাছ থেকেও বিরল প্রজাতির ধান সংগ্রহ করে বর্ধমান ক্যাম্পাসের কৃষিবিজ্ঞানীরা। তারপর ক্যাম্পাসের ভিতর প্রায় তিন একর খেত জমিতে চার বর্গমিটার করে ‘ব্লক’ করে বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ শুরু হয়েছে। ওই ক্যাম্পাসের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৌমেন বেরা বলেন, ‘‘দুটো প্রজাতির চাষের জন্য তিন মিটার দূরত্ব রাখা হচ্ছে। দু’বছর ধরে চাষ করে ধান গাছের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।” কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এক সময় ৫০০০ প্রজাতির ধান ছিল। তার মধ্যে বর্তমানে তিন হাজার প্রজাতির ধানের কোনও অস্তিত্বই নেই। কোনও রকমে দু’হাজার প্রজাতির ধান টিকে রয়েছে। এদের মধ্যে আবার হাতেগোনা কয়েকটি প্রজাতি ছাড়া বাকিদের দেখাও মেলে না।

আপাতত সুগন্ধী ধানের মধ্যে রাঁধুনি পাগল, কাঁটারি ভোগ, রাধাতিলক, ইন্দ্রাণী ভোগ, কামিনী ভোগ সহ নানা প্রজাতির ধান চাষ করা হচ্ছে। এই সব ধান বর্তমানে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবে চাষ করা হয়। অথচ বছর পঞ্চাশ আগেও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে চাষ করা হত। তেমনি রাঢ় বঙ্গ থেকে হারিয়ে যাওয়া কালো জিরে, দুর্গাশাল, কবিরাজ শাল ও উত্তরবঙ্গের কালোমুনিয়া, কলমার মতো সুগন্ধহীন ধানেরও চাষ করা হচ্ছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের কথায়, কলমা প্রজাতির ধানের চাল থেকে মুড়ি খুবই ভাল হত। এখন ওই প্রজাতির ধান কোনও চাষির ঘরেই মিলবে না। বিসিকেভির বর্ধমান ক্যাম্পাসের বংশগতি ও উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যার সহকারী অধ্যাপক স্বরূপানন্দ পাল বলেন, “হারিয়ে যেতে বসা ধানকে সংরক্ষণ ও তার সঙ্গে স্থানীয় ধান মিশিয়ে নতুন জাতের ধান উৎপাদনও করতে চাইছি আমরা। ধানের ‘জিন ম্যাপিং’ দেখে দুই প্রজাতির গুণগত জিনগুলি মিশিয়ে নতুন ধান তৈরির করা ইচ্ছা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rice farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE