Advertisement
E-Paper

শাস্তি চাই, মুকুলকে পেয়ে দাবি

নিহত শিমুলিয়ার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সানাউল্লা শেখ ওরফে ডালিমের পরিজন ও পড়শিরা এ দিন খুনে অভিযুক্ত বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০১:১৯
বিক্ষোভ: মুকুল রায়কে ঘিরে দোষীদের ধরার দাবি। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভ: মুকুল রায়কে ঘিরে দোষীদের ধরার দাবি। —নিজস্ব চিত্র।

নেতা খুনের পর থেকেই দলের অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তাঁরা। বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে হাতের কাছে পেয়ে মাত্রা ছাড়াল ক্ষোভ।

নিহত শিমুলিয়ার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সানাউল্লা শেখ ওরফে ডালিমের পরিজন ও পড়শিরা এ দিন খুনে অভিযুক্ত বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন। মুকুলবাবুকে ঘিরে ধরে চলে স্লোগান, ‘খুনি রহমতুল্লার শাস্তি চাই’, ‘সিদ্দিকুল্লা মুর্দাবাদ’। মুকুলবাবুর আশ্বাস, ‘‘আমি আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে বলছি প্রকৃত দোষী শাস্তি পাবেই।’’

সোমবার সন্ধ্যায় নিগন বাসস্ট্যান্ডের কাছে গুলিতে খুন হন বছর পঁয়ত্রিশের ডালিম শেখ। উল্টো দিকের দোকানে তখন দলের দুই কর্মীকে নিয়ে পান কিনছিলেন মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য মেহবুব চৌধুরী। তিনি জানান, গুলির আওয়াজ শুনে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে অন্ধকারে, বৃষ্টিতে আততায়ীদের দেখতে পাননি। পরে নিহতের স্ত্রী লাভলি বিবি অভিযোগ করেন, ‘‘ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন স্বামী। তাই বিধায়কের লোকেরা ওঁকে সরিয়ে দিল।’’ মাস ছয়েক আগে ওই গ্রামেরই সাজিদুর রহমান, ডাবলু শেখরা তাঁকে ‘বিধবা করার’ হুমকিও দিয়েছিলেন বলেও দাবি লাভলির। তাঁর অভিযোগ, তিন মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হতো প্রায়ই।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের সিপিএম কর্মী সাজিদুর রহমান ২০১১ সালে পড়শি ডালিমের হাত ধরে তৃণমূলে আসেন। গোড়ায় ডালিমের ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। বিধানসভা ভোটের পরে বিধায়কের দিকে পাল্লা ঝোঁকে তাঁর। দলের একাংশের দাবি, ডালিমকে সরিয়ে অঞ্চল সভাপতি হওয়ার ‘লোভ’ দেখিয়ে সাজিদুরকে দলে টানেন রহমতুল্লা ও বিকাশ। তারপর থেকে ডালিমকে তিনি হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ। বিধায়কের সঙ্গে ব্লক সভাপতির দ্বন্দ্বও চেনা।

মঙ্গলবার রাতে রহমতুল্লা চৌধুরী, বিকাশ চৌধুরীকে-সহ ১৫ জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করে নিহতের দাদা আসাদুল্লাও পুলিশের কাছে দাবি করেন, খুনের আগের দিন শিমুলিয়ায় একটি গোপন বৈঠক সারেন রহমতুল্লা ও বিকাশ। সেখানে ছক কষার কথা রাস্তায় যাওয়ার সময় তিনি ও দলের এক কর্মী নজরুল ইসলাম তা শুনে ফেলেন বলেও আসাদুল্লার দাবি। ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় শিমুলিয়ার বাসিন্দা সাদ্দাম শেখ, রওসন শেখ, জসিম শেখ, সাজিদুর রহমান, নূর আলি শেখ, বামুনগ্রামের উৎপল মাঝি ও ঠেঙাপাড়ার আঙুর শেখকে। ধৃতদের মধ্যে সাজিদুর ও নূর আলির ৬ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের ১৪ দিনের জেল হাজত হয় এ দিন। পুলিশের দাবি, রহমতুল্লা ও বিকাশের খোঁজ চলছে।

এ দিন মুকুলবাবু ও জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের আসার কথা শুনে হাজার পাঁচেক সমর্থকের ভিড় জমান। লাভলি বিবির সঙ্গে দেখা করে তাঁর তিন মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব দল নেবে বলে আশ্বাস দেন মুকুলবাবু। লাভলি বিবিকে চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেন। মুকুলবাবু বলেন, ‘‘ডালিমের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে পরিচয় ছিল।’’

মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের কথায় আগেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত মিলেছিল। এ দিন মুকুলবাবু বলেন, ‘‘দলের নেতাদের নাম খুনের অভিযোগে থাকলেই সে দোষী নয়। তবে অভিযুক্তরা যত প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় হোক না কেন, দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবেই।’’ অপূর্ব চৌধুরীকে এলাকায় সংগঠন দেখারও নির্দেশ দেন তিনি।

বিধায়ক অবশ্য এ দিনও খুনের পিছনে রাজনীতির যোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘গত এক বছর রহমতুল্লা ওই গ্রামে যাননি। অভিযোগ মিথ্যা। আইন আইনের পথে চলবে।’’ এলাকার কিছু ‘স্বার্থান্বেষী’ জল ঘোরাবার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আর ব্লক সভাপতি অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা না মেনে উপায় নেই। ওরা যুক্ত না হলে নিহতের আত্মীয়েরা অভিযোগ করত না।’’

Dalim Sheikh Murder Rahmatullah Chowdhury Mukul Roy punishment ডালিম শেখ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy