খোলা ভ্যানে শব নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ময়না-তদন্তে। নিজস্ব চিত্র।
শববাহী গাড়ি রয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহারের যোগ্য নয়। ফলে রাস্তা দিয়ে গাদাগাদি করেই মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ভ্যানে।
কখনও একটা কম্বল জোটে, আবার কখনও খোলা অবস্থাতেই একটার উপর একটা দেহ চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ময়না-তদন্তে। অনেক সময় রাস্তার মধ্যে দেহ পড়েও যায়। বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, প্রতিদিন ভরদুপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন পুলিশ মর্গের রাস্তায় আকছার দেখা যায় এমন দৃশ্য।
অথচ বছর খানেক আগে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ থেকে শববাহী ভ্যান দেওয়া হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শুরুর দিকে তা ব্যবহারও করা হতো। কিন্তু আপাতত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের পাশে আগাছায় ঠাঁই হয়েছে ভ্যানটির। যদিও এভাবে দেহ নিয়ে যাওয়া যে অমানবিক তা মেনে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘ওই শববাহী ভ্যানে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। মৃতদেহ তুললেই শববাহী গাড়িটি উল্টে যাচ্ছে। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটছে। সে কারণে, আপাতত ভ্যানে করেই দেহ পুলিশ মর্গ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।” তাঁর দাবি, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকে নতুন শববাহী গাড়ি দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একটি ভ্যানে প্রায়দিনই দুটো মৃতদেহ তো বটেই, কোনও কোনও দিন পাঁচটা দেহও নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেরে বেরোনোর সময়ে দেহের উপর একটি কম্বল ঢাকা দেওয়া থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থাকে না। আবার অনেক সময় ভ্যান থেকে দেহ পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা অমিতাভ দাস বলেন, “আগের থেকে ভ্যান চালকেরা সচেতন হওয়ায় রাস্তায় সে ভাবে দেহ পড়ে যায় না। কিন্তু যে ভাবে গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবসময় থেকে যায়।” হাসপাতালের কর্মীরা জানান, পথ দুর্ঘটনায় হাত বা পা কেটে যাওয়া নিহত ব্যাক্তিদেরও একই পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কম্বলের ফাঁক দিয়ে কাটা হাত বা পা দেখা যাওয়ায় পথচারীদের মধ্যেও ভীতি দেখা যায় অনেক সময়।
এলাকার বাসিন্দা সুনীতি সাহা, নূরন্নেসা বেগমদের ক্ষোভ, “ভরদুপুরে যে সময় মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তখনই স্কুল থেকে ছুটি হওয়ায় বাড়ি ফেরে পড়ুয়ারা। রাস্তায় খোলা মৃতদেহ দেখে আতঙ্কে ভোগে তারা।” স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার ভট্টাচার্য, রজনী সাহারাও বলেন, “যে ভাবে কম্বল ঢাকা দিয়ে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়, তা পুরোটাই অমানবিক। এ ভাবে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া দেখতেও খারাপ লাগে। প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা বিরক্ত।” একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বর্ধমান শাখার সম্পাদক সুশান্ত কুমার দাসের দাবি, “রাস্তা দিয়ে খোলা অবস্থায় মৃতদেহ যাওয়ার দৃশ্য শিশুদের মনে প্রভাব ফেলে। দ্রুত শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা উচিত।” আবার পরিজনদের দেহ ওভাবে নিয়ে যাওয়া দেখে ক্ষুব্ধ হন হাসপাতালে আসা লোকজনেরা। কেতুগ্রামের সন্তু সাহা কিংবা গলসির আনসারুল হকরা যেমন বলেন, “আমাদের পরিজনেরা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু পরে যেভাবে দেহ নিয়ে যাওয়া হল তা খুবই বেদনাদায়ক। দেখে মনে হচ্ছিল, মৃত্যুর পরেও ওঁরা শান্তি পেলেন না।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে ওই শববাহী গাড়িটি প্রথম থেকেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গাড়িটি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই, ওই গাড়ির বদলে মৃতদেহ ময়না-তদন্তে নিয়ে যাওয়া জন্য দুটি শববাহী গাড়ি দেওয়া হোক।’’ বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় গাড়ি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুরনো শববাহী গাড়িটিকে ফেরত নিয়ে নতুন করে টোটো গাড়িকে বৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি করে শববাহী গাড়িতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy