Advertisement
E-Paper

শ্মশান ঘাটের আধপোড়া দেহ তুলে আনলেই মেলে ৫০০ টাকা!

বহু বছর ধরে কঙ্কাল তৈরি ও পাচারের জন্য পরিচিত ভাগীরথী পাড়ের পূর্বস্থলী। পুলিশ ধরপাকড় চালালে ব্যবসার জায়গা বদলায়, কিছুদিন থমকেও থাকে ব্যবসা কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয় না কখনই। ধরা পড়ে না মূল পান্ডারাও। কেন এমন হাল, প্রশাসনই বা কী বলছে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।  আগে ভাগীরথীর পাড় বরাবর ঝুপড়ি ঘর করে মৃতদের এনে লুকিয়ে রেখে কঙ্কাল তৈরি হত। পুলিশের নজর পড়লেই ডেরা সরে যেত নদী বরাবর। এখন অবশ্য কারবার ছড়িয়েছে পূর্বস্থলী শহর, নদী পেরিয়ে অন্য জেলাতেও।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪১
সম্প্রতি পূর্বস্থলী থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি পূর্বস্থলী থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়। নিজস্ব চিত্র

দু’এক বছর নয়, চার দশক ধরে চলছে ব্যবসা।

আগে ভাগীরথীর পাড় বরাবর ঝুপড়ি ঘর করে মৃতদের এনে লুকিয়ে রেখে কঙ্কাল তৈরি হত। পুলিশের নজর পড়লেই ডেরা সরে যেত নদী বরাবর। এখন অবশ্য কারবার ছড়িয়েছে পূর্বস্থলী শহর, নদী পেরিয়ে অন্য জেলাতেও।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলীর বাসিন্দা দুই ভাই তাপস পাল ওরফে তপসা এবং মনোজ পাল ওরফে গপসা এই কারবারের বড় মাথা। তাঁদের নামে একাধিক অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু সঙ্গীরা ধরা পড়লেও তাঁদের ধরা যায়নি। সম্প্রতি নবদ্বীপ থানা এলাকার চর থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু কঙ্কাল। জানা যায়, তপসা ব্যবসা বিছিয়েছে সেখানেও। দিন দশেক আগে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ জেরা শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, মোটা মুনাফার লোভেই জায়গা বদলে ব্যবসা চালায় তপসা। তবে তপসার জুটি গপসার খোঁজ পায়নি পুলিশ। ২০১৪ সালেও পূর্বস্থলীর দেবনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ কঙ্কাল তৈরির কারখানা নষ্ট করে দেয়। সে বারেও উদ্ধার হয় প্রচুর নরকঙ্কাল।

জানা যায়, প্রায় চল্লিশ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেন পূর্বস্থলী বাসিন্দা মুক্তি বিশ্বাস। প্রথমে নবদ্বীপ, পরে পূর্বস্থলী থানা লাগোয়া একটি ঘাটে শুরু হয় ব্যবসা। দুটো নৌকায় করে মুক্তির শাগরেদরা মৃতদেহ জোগাড় করে আনত। নদীর ফাঁকা ঘাটে বড় ড্রামে পচানো হত দেহ। কখনও আগুনে সেদ্ধ করে হাড়-মাংস আলাদা করা হত। পরে তা সাফ করে বিক্রি হয়ে যেত দেশে-বিদেশে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গন্ধ, দূষণের কারণে বিরোধিতা শুরু করায় সেই ডেরা বন্ধ করে বেলেরহাট স্টেশন লাগোয়া এলাকায় নতুন ডেরা বাঁধেন মুক্তি। পুলিশ জানায়, বারবার মুক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা হয়েছে তাঁর ছেলে বলা বিশ্বাসকেও। কিন্তু কারবার বন্ধ করা যায়নি। এখন যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরাই মুক্তিরই শাগরেদ ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

কিন্তু এত দেহ মেলে কী ভাবে?

জানা যায়, গোড়ায় নদীতে বড় বড় বাঁশ ফেলে রাখতেন মুক্তি এবং তাঁর লোকজনেরা। সর্পাঘাত, জলে ডোবা দেহ স্রোতে ভেসে আসার সময় আটকে যেত ওই বাঁশে। তারপর তা তুলে তৈরি করা হত কঙ্কাল। তবে বছর পনেরো আগে থেকে ভেসে আসা দেহ কমতে থাকে। তখন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গ, শ্মশান ঘাটের আধপোড়া মৃতদেহ তুলে নিয়ে কারবারিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। এ কাজের জন্য ৫০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত দর মেলে। পূর্বস্থলীর এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘তপসা জেরায় জানিয়েছে এখন ওডিশার ভুবনেশ্বর থেকেও মৃতদেহ আসে। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গলে ফেলে দেওয়া দেহ তুলে আনেন এজেন্টরা।’’

কিন্তু এমন বেআইনি কাজ করেও কেন ছাড়া পেয়ে যায় ধৃতেরা? কোন সাহসেই বা ফের জায়গা বদলে ব্যবসা শুরু করে? পুলিশের দাবি, আইনে ফাঁক থাকাতেই ধরে রাখা যায় না এদের।

Business Illegal Skeleton Dead body Odisha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy