Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রান্নাঘরে পড়ে প্রৌঢ়ার দেহ, ধন্দ বড়শুলে

বুধবার রাতে বড়শুল-উন্নয়নীর আবাসনে ঢুকে এমন দৃশ্যই দেখেছিলেন বলে অভিযোগ বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৯) নামে ওই প্রৌঢ়ার ছেলে চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় শক্তিগড় থানায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সে দিন বিকেলেই খুন করা হয়েছে বাসবীদেবীকে।

বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৯
Share: Save:

বাড়ির দরজা অর্ধেক খোলা। খাওয়ার টেবিল ও তার পাশে বেসিনের নীচে পড়ে দু’টি চায়ের কাপ। রান্নাঘরে পড়ে রয়েছেন প্রৌঢ়া। তাঁর নাক-মুখ থেকে বেরোনো রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে।

বুধবার রাতে বড়শুল-উন্নয়নীর আবাসনে ঢুকে এমন দৃশ্যই দেখেছিলেন বলে অভিযোগ বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৯) নামে ওই প্রৌঢ়ার ছেলে চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় শক্তিগড় থানায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সে দিন বিকেলেই খুন করা হয়েছে বাসবীদেবীকে। সম্ভবত দু’জন আততায়ী ছিল, যারা প্রৌঢ়ার পরিচিত। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ঘটনার কিনারা হয়নি।

১৯৭৮ সাল থেকে বড়শুলের ওই সরকারি আবাসনে রয়েছেন বাসবীদেবীরা। তাঁর স্বামী সোমনাথবাবু বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তাঁর মৃত্যু হয়। ছেলে চন্দনবাবু কলকাতায় এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী। মেয়ে হৈমন্তীদেবী জামালপুরের বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে কলকাতায় কর্মস্থলে যান চন্দনবাবু। বাড়ি ফেরেন রাত ৮টা নাগাদ। সারা দিন বাড়িতেই থাকতেন বাসবীদেবী। ছাদে বা বাড়ির সামনে গাছের পরিচর্যা করতেন। পাড়ার কুকুরদেরও দেখভাল করতেন।

চন্দনবাবু জানান, বুধবার রাতে বাড়ি ফিরে অর্ধেক দরজা খোলা দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। ভিতরে ঢুকে দেখেন খাবার টেবিল ও বেসিনের নীচে চা-খাওয়া দু’টি স্টিলের কাপ রয়েছে। মাকে দেখতে না পেয়ে রান্নাঘরের কাছে যান। তাঁর কথায়, “দেখি মা পড়ে রয়েছেন। কাছে গিয়ে দেখি মায়ের মুখ-নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। শুকিয়েও গিয়েছে। গলার কাছে আঙুলের স্পষ্ট দাগ।” পুলিশের ধারণা, খুন করার আগে চা খেয়েছিল আততায়ীরা। তারা সম্ভবত বাসবীদেবীর পরিচিত। খুনের আগে আততায়ীরা হাতে গ্লাভস জাতীয় কিছু পরে নেয়, যাতে আঙুলের ছাপ পাওয়া না যায়। পুলিশ মনে করছে, আততায়ীদের চা দেওয়ার পরে বাসবীদেবী রান্নাঘরে ঢুকেছিলেন। চা খেয়ে দুষ্কৃতীরা রান্নাঘরে ঢুকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তাঁকে। বাসবীদেবীর সঙ্গে আততায়ীদের ধস্তাধস্তি হয়েছিল, সে চিহ্নও রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশের কাছে চন্দনবাবু অভিযোগ করেন, মায়ের গা থেকে লক্ষাধিক টাকার গয়না খোয়া গিয়েছে। তাঁদের পরিজন চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়, বাসুদেব দে অভিযোগ করেন, “বড় চুরির উদ্দেশে আততায়ীরা বাড়িতে ঢুকেছিল। গয়না নেওয়ার পরে বাসবীদেবীকে মারধর করার সময়ে তাঁর মৃত্যু হওয়ায় তারা পালিয়ে যায়।” পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে স্বামী সোমনাথবাবুর বিশেষ পরিচিত দাবি করে এক জন বাসবীদেবীর বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি এক সময়ে তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন গাছের চারা দিতেন। সে দিন বাড়ির ছাদ ও সামনের জায়গায় কোথায় গাছ লাগালে ভাল হয়, সে পরামর্শও দেন বাসবীদেবীকে।

বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে চন্দনবাবু বলেন, “বাবার পরিচিত বলে দাবি করায় মা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তি মায়ের কাছে দাবি করেছিলেন, আমিও নাকি মাস তিনেক আগে তাঁকে বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আমার তেমন কিছু মনে পড়ে না।” খুনের ঘটনার সঙ্গে এর কোনও যোগ আছে কি না, ধন্দে রয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE