Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-আতঙ্কেও সাফাইয়ে গা নেই পুরসভার, ক্ষোভ

এক মাসে দেড়শোরও বেশি বাড়ির মধ্যে জমা জলে মশার লার্ভা পেয়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। তারপরেও ডেঙ্গি সচেতনতায় ঘুম ভাঙেনি পুরসভার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
সর্বমঙ্গলা পাড়ায় অপরিষ্কার নালা। — নিজস্ব চিত্র।

সর্বমঙ্গলা পাড়ায় অপরিষ্কার নালা। — নিজস্ব চিত্র।

এক মাসে দেড়শোরও বেশি বাড়ির মধ্যে জমা জলে মশার লার্ভা পেয়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। তারপরেও ডেঙ্গি সচেতনতায় ঘুম ভাঙেনি পুরসভার।

গত বছর বর্ধমানের বেশ কিছু ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। মারাও গিয়েছিলেন ৫ জন। এ বার কলকাতা বা অন্য জেলার মতো ডেঙ্গি এখনও ধরা না পড়লেও র‍্যাপিড টেস্টে এনএস ১ জীবাণু মিলেছে অন্তত ৩০ জনের দেহে। তার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে অ্যালাইজা পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যেই ডেঙ্গি নিয়ে ভুল রিপোর্ট দেওয়ায় বর্ধমান শহরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালকে শো-কজ করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জানা গিয়েছে, র‍্যাপিড টেস্টে এনএস ১ জীবাণু পাওয়ার পরেই পাঁচ জন রুগীকে ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে জানিয়েদিয়েছিল ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অ্যালাইজা পরীক্ষার পরে দেখা যায় ডেঙ্গির কোনও লক্ষ্মণই নেই তাঁদের।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান পুরসভার ৫৭ হাজার ৯০৬টি বাড়ির মধ্যে ৫২ হাজার ৮২৫টি বাড়িতে জুনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। তার মধ্যে ৯১৮টি বাড়িতে মশার লার্ভা মেলে। জুলাইয়েও ১০৯৯টি বাড়ি থেকে মশার লার্ভা মেলে। অর্থাৎ এক মাসে অতিরিক্ত ১৮১টি বাড়িতে মশার লার্ভা পেয়েছেন পুরকর্মীরা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তদের অভিযোগ, পরিষ্কার জলে মশার লার্ভা পাওয়ার পরেই পুরসভাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা পুরোপুরি মাঠে না নামায় তা বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘সচেতন’ করেছেন বলে যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতেও গলদ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি। জেলার ডেপুটি সিএমওএএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে আমরা বেশ কিছু বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি, পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীরা সেখানে যাননি। আমরা সেখান থেকে মশার লার্ভাও পেয়েছি।”

আবার পুরসভার স্বাস্থ্য কর্মীদের অভিযোগ, বহুতল বাড়ি বা নির্মীয়মাণ বহুতলে সাত দিনের জল জমা থাকছে। বিশেষ করে বহুতল বাড়িতে শীতাতপনিয়ন্ত্রক মেশিনের জল, টবে জমে থাকা জলে মশার লার্ভা বেশি থাকছে। কিন্তু ওই সব বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীরা ঢুকতেই দিচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি। সুনেত্রাদেবীর যদিও আশ্বাস, ‘‘বাধা পেলে আমাকে জানান। আমি ওই সব বাড়িতে গিয়ে বাধা সরাব।” তাঁর দাবি, “স্বাস্থ্য ও পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন। জমা জল ফেলে দিচ্ছেন। কিন্তু প্রত্যেক পরিবারকে পরিষ্কার থাকতে হবে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মতে, বৃষ্টিতে বাড়িতে জমা জল সাফাইয়ে গা করেন না অনেকেই। পুরসভাও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু বিপদ থাকে তাতেও। জেলাশাসকের দফতরের সামনে থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকাটাই ভয়ের কারন বলে স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি। সুনেত্রাদেবীর কথায়, “কয়েক দিন ধরে পুরসভা নড়েচড়ে বসেছে। আমরা চাই, প্রতিটি কাউন্সিলর বিশেষ উদ্যোগ করুক।”

কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা? জানা গিয়েছে, গত ৫ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী আসছেন বলে মশা-নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে পুরসভা। তারপর থেকে স্কুল ও অফিসে মশা মারতে কোথাও স্প্রে তো কোথাও কামান দাগা হয়েছে। পুরসভার উপপুরপ্রধান তথা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা খোন্দেকার মহম্মদ শাহিদুল্লা বলেন, “বাড়ি বাড়ি সকালে স্প্রে ও বিকেলে ধোঁয়া দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রতিদিন তিনটে করে ওয়ার্ডে এই কাজ চলছে। এ ছাড়াও তিন দিন ধরে ডেঙ্গি-সচেতনতার গাড়ি বের করা হবে।”

বর্ধমান স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “আরও সচেতন হতে হবে। নজরদারিও বাড়াতে হবে।”

Dengue burdwan municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy