Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

তালপাতার পুঁথি থেকে কুস্তির প্যাঁচে চলছে বনেদি পুজো

মঙ্গলকোটের পুরনো জনপদগুলির মধ্যে গণপুর অন্যতম। এখানকার ভট্টাচার্য পরিবারে দুর্গাপুজো হয় পুরনো তালপাতার পুঁথি ধরে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:১০
Share: Save:

বর্তমানে কাটোয়ার বেশির ভাগ বড় সর্বজনীন পুজোগুলি হয় নির্দিষ্ট থিমে। পাশাপাশি প্রাচীন প্রথা, রীতি মেনেই চলছে কাটোয়ার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলি। পুজোর দিনে বহু মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কাটোয়া থেকে কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের বনেদি বাড়ির পুজোগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।

মঙ্গলকোটের পুরনো জনপদগুলির মধ্যে গণপুর অন্যতম। এখানকার ভট্টাচার্য পরিবারে দুর্গাপুজো হয় পুরনো তালপাতার পুঁথি ধরে। প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো এই পুজোয় অংশ নেন এলাকার বাসিন্দারাও। অন্যদিকে মঙ্গলকোটের উনিয়া গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রায় দুশো বছরের পুরনো ব্যাঘ্রবাহিনীর পুজো দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান। এখানে দেবীর বাহন বাঘ। কথিত আছে, মা মহামায়া বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এক সদস্যকে স্বপ্নাদেশ দেন জয়া-বিজয়া সহ ব্যাঘ্রবাহিনী রূপে তাঁর পুজো করতে। মঙ্গলকোটের সাঁওতার কোঁয়ার বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল প্রায় আড়াইশো বছর আগে। এখানে বোধনের দিন থেকেই শুরু হয় পুজো। বিজলি বাতির বদলে মশালের আলোয় পুজো হয়। পুজোর আর এক আকর্ষণ দেবীর ঘট। প্রায় কুড়ি লিটার জল ধরে ওই ঘটে। নবমীর দিন গোটা গ্রামের মানুষকে ভোগ খাওয়ানো হয়। মঙ্গলকোটের ইট্টাগ্রামে একই মন্দিরে পাশাপাশি দুই দেবীর পুজো হয় রায়চৌধুরী পরিবারে। একটি হলেন মা তারা ও অন্যটি দেবী দুর্গা। প্রায় ৬০০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয় গঙ্গাধর রায়চৌধুরীর হাত ধরে। মঙ্গলকোটের আওগ্রামে গোস্বামী বাড়িতে দুর্গাপুজো হয় বৈষ্ণব আচার মেনে।

কাটোয়ার শ্রীখণ্ডের রায় বাড়ির পুজোর আয়োজন করেন বাড়ির পুরুষেরাই। প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের খাটুন্দির ভট্টাচার্য বাড়িতে একই উঠোনে সাত মন্দিরে সাত দুর্গার পুজো করা হয়। কাটোয়া শহরের হাঁড়িবাড়িরতলার পুজোয় ভিড় করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সিদ্ধেশ্বরী তলায় বিশ্বাস বাড়িতে দেবী দুর্গার আরাধনা হয় মাছের ভোগ নৈবেদ্য দিয়ে। কাটোয়া শহরের কাছারিপাড়ায় সাহা বাড়ির দুর্গা পুজো এবার ১৫৫ বছরে পড়েছে। ওই বাড়ির সদস্য গৌরসুন্দর সাহা বলেন, “আমাদের পুজোয় আগে অষ্টমীতে বন্দুকের গুলি ছোড়া হত। সে প্রথা এখন বন্ধ হয়েছে। পুজোয় প্রচুর মানুষ আমাদের বাড়িতে আসেন।”

কাটোয়া শহরের হরগৌরীপাড়ায় পুজো হয় হরগৌরীর মূর্তিতে। কাটোয়ার গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতে এখনও পুরনো তালপাতার পুঁথি ধরেই পুজো হয়। কেতুগ্রামের বহরানের রায়পরিবারের দুর্গা পূজিত হন সিংহবাহিনী রূপে। আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। কাটোয়া ২ ব্লকের শ্রীবাটী গ্রামের চন্দ্র বাড়িতে প্রায় ৩০০ বছর আগে দুর্গা পুজো শুরু হয়। কাটোয়া ১ ব্লকের করজগ্রাম পঞ্চায়েতের বনগ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুঁই চিংড়ির দুর্গা নামে খ্যাত। কেতুগ্রামের ঝামটপুরের রায় বাড়ির পুজোয় দশমীর দিন বিসর্জনের আগে কুস্তির প্যাঁচ কষা ও লাঠি খেলা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE