Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

করোনার প্রভাবে বায়না হয়নি, অন্য পেশায় ঢাকিরা

শেষ পর্যন্ত ডাক মিলবে না কি বছরটাই ঘরে বসে কাটাতে হবে—এমন আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কাঁকসা ও আউশগ্রাম ২ ব্লকের ঢাকিরা। তাঁরা জানান, এ বছর গ্রামের চব্বিশ প্রহর, মনসাপুজো না হওয়ায় মার্চ মাস থেকে এক প্রকার বাড়িতে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়।

বাড়িতেই ঢাকিরা। আউশগ্রাম ২-এর মাজুরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতেই ঢাকিরা। আউশগ্রাম ২-এর মাজুরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩০
Share: Save:

প্রতি বছর রথযাত্রার পর থেকেই তাঁদের বায়না শুরু হয়ে যায়। কিন্তু করোনার প্রকোপের জেরে এ বছর পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। এখনও কোনও দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদের তরফে ডাকা মেলেনি। শেষ পর্যন্ত ডাক মিলবে না কি বছরটাই ঘরে বসে কাটাতে হবে—এমন আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কাঁকসা ও আউশগ্রাম ২ ব্লকের ঢাকিরা। তাঁরা জানান, এ বছর গ্রামের চব্বিশ প্রহর, মনসাপুজো না হওয়ায় মার্চ মাস থেকে এক প্রকার বাড়িতে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়।
পুজো মানেই ঢাকের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মণ্ডপ হোক বা বাড়ির পুজো দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকিরা এসে সেই আনন্দকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। সারা বছর ধরে বাঙালির নানা উৎসবের অন্যতম সঙ্গী ঢাক হলেও দুর্গাপুজোয় এর চাহিদা বেশি থাকে। কাঁকসার পাশের এলাকা আউশগ্রাম ২ ব্লকের মাজুরিয়া গ্রামে ১৪ জন ঢাকি রয়েছেন। এই গ্রামের বেশ নামডাক রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, বিশ্বকর্মা, দুর্গাপুজো, কালীপুজো তো আছেই। তার সঙ্গে রয়েছে গ্রাম বাংলার চব্বিশ প্রহর, গাজনের মতো নানা উৎসবেও তাঁদের ডাক আসে। ব্যতিক্রম ২০২০।
মাজুরিয়ার ঢাকশিল্পী মঙ্গল রুইদাস বলেন, ‘‘মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত গাজন, চব্বিশ প্রহরে ডাক মেলে। কিন্তু এ বছর করোনার জেরে প্রায় সমস্ত গ্রামেই অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গিয়েছে। হলেও খুব ছোট করে অনুষ্ঠান হয়েছে। তাতে ডাক মিলছে না। ফলে, রোজগারে টান পড়েছে।’’ তিনি জানান, তাঁরা সকলেই তাকিয়ে থাকেন রথযাত্রার দিকে। কারণ, বিশ্বকর্মা পুজো হোক বা দুর্গাপুজো, কালীপুজো— বায়না শুরু হয় এই রথযাত্রা থেকেই। তাঁরা আন্দামান, ইলাহাবাদ, কানপুরের মতো দেশের নানা প্রান্তে ঢাক বাজিয়ে এসেছেন।
আবার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজোরও ধুম বেশি। সেখানেও বহু ঢাকি যান। কিন্তু ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ বিশ্বকর্মা পুজো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই সেই আয়ও বন্ধ। মাজুরিয়ার ঢাকি কার্তিক রুইদাস, নিমাই রুইদাসরা বলেন, ‘‘এখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ একই অবস্থা কাঁকসার অযোধ্যা, বনকাটির ঢাকি জীবন রুইদাস, লখু রুইদাসদেরও।
ঢাকিরা জানান, দুর্গাপুজোয় বাইরে কোথাও ঢাক বাজাতে গেলে তাঁদের এক-এক জনের আয় হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। অনেকেই ভাল উপার্জন করেন। তাঁদের আশঙ্কা, রথযাত্রা দু’মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও পুজো উদ্যোক্তা তাঁদের বায়না করেননি। আশার কথা শোনাতে পারেননি পুজো উদ্যোক্তারাও। তাঁরা জানান, এই মহামারিতে দুর্গা বা কালীপুজো কতটা ধুমধামের সঙ্গে হবে তা বলা মুশকিল।
ফলে, ঢাকিদের ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus lockdown durgapuja dhaki
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE