দুর্গাপুরের দোকানে ‘বাটার বাইট’ মিষ্টি। নিজস্ব চিত্র।
দাদা-ভাইয়ের মধুমেহ। তাই রসগোল্লা, পান্তুয়ার মারকাটারি বাজারেও দিদি-বোনেরা খুঁজে নিচ্ছেন খানিক অন্য মিষ্টিও। আর তাই বোধহয় ভাইফোঁটার বাজারে এ বার চিরাচরিত মিষ্টির পাশাপাশি কদর বেড়েছে ‘নীরা কালাকাঁদ’, ‘ভেজ পায়েস’, ‘পোস্ত মালাই’য়ের মতো মিষ্টিরও।
সিটি সেন্টারের একটি মিষ্টির দোকান। সকাল সকাল লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন এক মহিলা। রসগোল্লার সঙ্গে কিনলেন নীরা কলাকান্দও। কেন? তিনি জানান, ভাইয়ের মধুমেহ। কিন্তু ভাইফোঁটায় মিষ্টি মুখ না করালে কি চলে? চকো বাইট, স্ট্রবেরি বক্স, সব্জি দিয়ে বানানো ভেজ পায়েস, অমৃত কলস, পেস্তা মালাই, ভাপা চিত্তরঞ্জনের মতো মিষ্টিরও এ বছর ভাল চাহিদা বলে জানান বিক্রেতারা। এ ছাড়াও অনেকে পেঁপে, গাজর, দুধ ও কিসমিসের তৈরির পায়েসও পছন্দ করছেন বলে বিক্রেতাদের দাবি।
এই ‘নীরা’ মিষ্টি তৈরির ইতিহাসটা কেমন? কেরলের ‘সেন্ট্রাল প্ল্যান্টেশন ক্রপস্ রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিপিসিআরআই) এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন গবেষক ও শিক্ষক মিলে নারকেল ফুল থেকে রস বের করার কাজ শুরু করেন। ওই রসেরই সরকারি নাম ‘নীরা’ বা ‘কল্পরস’। সেই রস দিয়েই তৈরি হয় মিষ্টি। কৃষি বিজ্ঞানীদের দাবি, নারকেল ফুলের রসে ইনিউলিন নামে এক ধরনের ফাইবার থাকে, যা শর্করাকে রক্তে মিশতে বাধা দেয়। তাই মধুমেহ আক্রান্ত রোগীদের পক্ষে এটি খেতে কোনও বাধা নেই। কবিগুরু এলাকার একটি মিষ্টির দোকানের মালিক দীপক সাহার দাবি, ‘‘নীরা কলাকান্দের কদর এ বার খুব ভাল। তুলনায় হালকা মিষ্টি। ছেলে-বুড়ো সকলেই পছন্দ করছেন।’’
তবে এই ধরনের মিষ্টির কদরের মাঝে সাবেক রসগোল্লা বা পান্তুয়ার বাজার এতটুকুও কমেনি বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। সিটি সেন্টারের একটি মিষ্টির দোকানের মালিক অশোককুমার নাগ জানান, উৎসবের মরসুমে উপহার দেওযার জন্য ক্রেতারা কড়া পাকের মিষ্টি পছন্দ করেন। দীপাবলী ও ভাইফোঁটাতে এ ধরনের মিষ্টির বাজার সবথেকে ভাল। তবে তাঁর দাবি, ‘‘কম মিষ্টির সন্দেশও রয়েছে। কিন্তু রসগোল্লা-পান্তুয়ার বাজার সবথেকে বেশি।’’ একই কথা বলেন দীপকবাবুও। প্রায় ৩০ বছর ধরে মিষ্টির দোকান রয়েছে তাঁর। তাঁরও দাবি, ‘‘অন্য মিষ্টি ক্রেতাদের ভাল লাগলেও রসগোল্লার বাজারে ভাটা পড়েনি কোনও দিন।’’
তবে মিষ্টি বিক্রেতাদের আক্ষেপ, মধুমেহর প্রকোপ বাড়তে থাকায় বছরভর কড়া পাকের মিষ্টির বাজার খানিকটা হলেও আগের তুলনায় কমেছে। নীরা কলাকান্দের মতো মিষ্টিগুলি আগামী দিনে সেই খামতিই পুষিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতাদের একাংশ।
অন্য দিনের তুলনায় ভাইফোঁটায় মিষ্টি কেনার হিড়িক তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। সে জন্য দীপাবলির পরে থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছেন বিক্রেতারও। দীপাবলির দিন থেকেই দুর্গাপুর-বরাকরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। সিটি সেন্টারের একটি দোকান থেকে বেরিয়ে অনুরাধা সরকার বলেন, ‘‘ভিড় থেকে বাঁচতে আগের দিন এসেছিলাম। তাতেও রেহাই নেই। তবে শেষমেশ পছন্দের মিষ্টি পেয়েছি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy