Advertisement
E-Paper

জোড়া খুনের বিচার চাইছে দুই পরিবার

খানিক আগে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। পাড়ার বেশ কিছু ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে বুথে যাচ্ছিলেন শেখ হাসমত সাগা। তাঁরা বুথে পৌঁছনোর কিছুটা আগেই বিকট আওয়াজ। ধোঁয়ায় ভরে উঠল এলাকা। তা খানিকটা পরিষ্কার হওয়ার পরে দেখা গেল, মাটিতে পড়ে রয়েছে হাসনতের রক্তাক্ত দেহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭

• জামুড়িয়ার মদনতো়ড় পঞ্চায়েতের মধুডাঙা গ্রামে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের সকালে জোড়া খুন।

• বুথে যাওয়ার পথে খুন সিপিএমের শেখ হাসনত সাগা, খানিক পরেই পাল্টা খুন তৃণমূল কর্মী রাজকুমার কোড়া।

• হাসনত খুনে অভিযুক্ত ১২, রাজকুমার খুনে অভিযুক্ত ১৪।

• খুন-পাল্টা খুনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে গত ২২ মার্চ।

খানিক আগে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। পাড়ার বেশ কিছু ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে বুথে যাচ্ছিলেন শেখ হাসমত সাগা। তাঁরা বুথে পৌঁছনোর কিছুটা আগেই বিকট আওয়াজ। ধোঁয়ায় ভরে উঠল এলাকা। তা খানিকটা পরিষ্কার হওয়ার পরে দেখা গেল, মাটিতে পড়ে রয়েছে হাসনতের রক্তাক্ত দেহ।

এর কিছুক্ষণ পরে ওই বুথ থেকে খানিকটা দূরেই আবার গোলমাল। ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর এক যুবককে। মিনিট কয়েকের মধ্যে নিথর হয়ে গেল রাজকুমার কোড়ার দেহ।

২০১৩-এর ১৫ জুলাই সকালে পরপর এই দুই খুনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল জামুড়িয়ার মদনতোড় পঞ্চায়েতের মধুডাঙা গ্রাম। সে দিন ছিল পঞ্চায়েত ভোট। হাসনতের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি ছিলেন পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী। রাজকুমারের বাড়ি ছিল জামুড়িয়া পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। খুন-পাল্টা খুনের পরেও অবশ্য ওই বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। মানোয়ারা নিজেও ভোট দিয়েছিলেন।

মানোয়ারা অভিযোগ করেন, সে বার ভোটের আগে থেকেই তাঁরা আতঙ্কে ছিলেন। কারণ, শাসক দল এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল। কিন্তু এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে তা তাঁরা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি, জানান মানোয়ারা। হাসনাতের ভাইপো জব্বর সাগার অভিযোগ, ‘‘আমাদের পাড়াতেই এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভোটের আগে থেকে গাড়িতে করে অস্ত্র এনে মজুত করেছিল ওরা। আমাদের নেতা-কর্মীরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ভোটের দিন সকাল থেকেই বুথ দখলের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আমার কাকা-সহ অনেকেই সে জন্য রাত জাগেন। সকালে ভোট শুরু হতেই তাঁরা বুথে যাচ্ছিলেন। তখনই তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায়।’’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বুথের কিছুটা আগে হাসনতদের রাস্তা আটকায় কিছু লোকজন। হাসনত প্রতিবাদ করতেই বোমা ছোড়া হয়। লুটিয়ে পড়েন তিনি। এর পরেই বুথের কাছে থাকা সিপিএম কর্মীরা ধাওয়া করে ওই দুষ্কৃতীদের। কিছুটা দূরে তারা পাকড়াও করে জামুড়িয়া শহরের যুব তৃণমূল নেতা রাজকুমারকে। কুড়ুল, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরে প্রাণ হারান তিনিও। থমথমে হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

সে বার ৯৬ ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের সদস্য হন মানোয়ারা। হাসনতকে খুনে তাঁর ভাইপো জব্বর জামুড়িয়া থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। মানোয়ারা বলেন, ‘‘যা হারিয়েছি তা আর ফিরে পাব না। আমাদের শান্তির সংসার ছিল। এখন ছেলেমেয়েকে বাপের বাড়ির কাছে মাদ্রাসায় পড়াশোন করাতে হচ্ছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’

রাজকুমারের ভাই কার্তিক কোড়া দাবি করেন, তাঁদের পিসির বাড়ি মধুডাঙা গ্রামে। রাজকুমার সেখানে সেই সময়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সকালে বোমার আওয়াজ শুনে অনেকের মতো তিনিও কী ঘটেছে দেখতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিপিএমের লোকজন রাজকুমারকে পিটিয়ে মারে বলে অভিযোগ কার্তিকের। তিনি বলেন, ‘‘পরে শুনেছি, দাদাকে না কি অনেকে ভেবেছিল, বাইরে থেকে সন্ত্রাস চালাতে গিয়েছিল ওই এলাকায় গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে কি তৃণমূলের কোনও নেতা-কর্মীর সঙ্গে আগে কেউ এলাকায় দেখেছিলেন? তা হলে মিথ্যে সন্দেহের বশে তাঁকে এ ভাবে খুন করা হল কেন!’’ রাজকুমারের স্ত্রী গীতা কোড়া গত পুরভোটে জামুড়িয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ১৮৭০ ভোটে দিতে কাউন্সিলর হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুনে ষড়যন্ত্রকারীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’

রাজকুমার খুনের ঘটনায় চোদ্দ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতা অলোক দাস। তিনি দাবি করেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে মিথ্যে অভিযোগে আমাদের দুই কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার তিন দিন পরে সিপিএমের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বাকি দশ জন অভিযুক্তকে আদালতে আত্মসমর্পন করাই আমরা।’’ পক্ষান্তরে, সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল হাসনতের বৃদ্ধ বাবার নামেও অভিযোগ করেছিল, যাঁর সঙ্গে ঘটনার কোনও সম্পর্কই নেই!’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমার খুনে এক অভিযুক্ত ধরা পড়েনি। এ ছাড়া জোড়া খুনের ঘটনায় সব অভিযুক্তই এখন জামিনে মুক্ত। ২২ মার্চ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে দুই পরিবারই।

murder victim crime election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy