‘সেঞ্চুরি’ পেরনোর পরে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যায় তুলনায় ধীর গতিতে এগোচ্ছে পূর্ব বর্ধমান। গত এক সপ্তাহে জেলায় সাত জন করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ২ জুন এক সঙ্গে ন’জনের শরীরে করোনার প্রমাণ মিলেছিল। সে দিনই জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একশো পেরিয়ে যায়। তার আগে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে হু-হু করে আক্রান্তের সন্ধান মিলছিল।
জুনের গোড়া থেকে হঠাৎ করোনা-আক্রান্ত কম মিলছে কী ভাবে? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, মে মাস জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরেছেন। প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিকের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। উপসর্গ থাক বা না থাক, সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এক-এক দিনে হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে তিনটি যন্ত্র, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও কাঁকসার বেসরকারি হাসপাতালে সেগুলি পরীক্ষা হচ্ছিল। পরীক্ষা বেশি হওয়ার ফলে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এক দিনে ২১ জনের দেহে করোনা ‘পজ়িটিভ’ রিপোর্ট আসে।
তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নমুনা জমে যেতে থাকায় এক সময়ে সংগ্রহ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, তার পরে পরীক্ষাও কম হতে থাকে। আবার আইসিএমআর নির্দেশ দিয়েছে, শুধু যাঁদের উপসর্গ রয়েছে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করালেই হবে। ফলে, উপসর্গহীনদের নমুনা সংগ্রহ কমে যায়। পরীক্ষার হারও কমতে থাকে। তা ছাড়া, জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক ফেরার সংখ্যাও এখন কমেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৯২ লক্ষ বাড়িতে নজরদারি চালিয়েছেন আশাকর্মীরা। প্রতিদিন দেড়-দু’লক্ষ বাড়িতে গিয়ে তাঁরা রিপোর্ট সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। উপসর্গ রয়েছে, এমন বাসিন্দার সন্ধান কম মিলছে বলে রিপোর্ট দিয়েছেন তাঁরাও।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘আইসিএমআরের নির্দেশিকা মেনে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিক আসা কমেছে, নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলি থেকেও শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকে রাখা গিয়েছে। সে জন্যই এখন করোনা-আক্রান্তের খোঁজ সে ভাবে মিলছে না।’’ জেলায় গত শুক্রবার তিন জন, রবিবার দু’জন, সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এক জন করে করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। শনিবার ও মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল শূন্য।
জেলা প্রশাসন জানায়, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১২৯ জনের আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তার মধ্যে ১১৪ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এক সময়ে জেলায় নিভৃতবাস কেন্দ্রে ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিক ছিলেন। এখন রয়েছেন হাজার পাঁচেক। কমানো হয়েছে নিভৃতবাস কেন্দ্রও। তবে বাড়ি-বাড়ি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতীর বক্তব্য, ‘‘একেবারে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত নজরদারি কমিটি রয়েছে জেলায়। প্রতিটি স্তরে নজরদারি থাকায় উপসর্গ রয়েছে অথচ পরীক্ষা হয়নি, এমন হওয়ার আশঙ্কা নেই।’’