Advertisement
E-Paper

নিজেরাই নিজেদের দেখব, বলছেন বয়স্করা

সাড়ে চারশো জনের উপস্থিতিতে চড়ুইভাতি বলে যায় মিলন উৎসবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪০
চলছে পিকনিক। নিজস্ব চিত্র

চলছে পিকনিক। নিজস্ব চিত্র

কেউ গাইছেন ‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই/ আজ আমাদের ছুটি।’ গান শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে আর এক জন ধরছেন, ‘এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয়, আলোয়’।

খাঁচা থেকে বেরনো পাখির মত এ ভাবেই দিনভর আনন্দ, আড্ডায় মেতে উঠলেন বর্ধমান শহরের ষাটোর্ধ্বরা। সংসার, শরীরের নানা সমস্যা ভুলে নির্ভেজাল আনন্দে কেউ ভাঙা গলায় আবৃত্তি করলেন, কেউ গান শোনালেন, কেউ আবার নেচেও উঠলেন। তাঁদের কথায়, ‘কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলান মনে হচ্ছে।’

শুক্রবার বর্ধমান শহরের বয়স্কদের নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করা হয় লাকুর্ডি জলকল মাঠে। সাড়ে চারশো জনের উপস্থিতিতে চড়ুইভাতি বলে যায় মিলন উৎসবে। সকাল ৯টা থেকেই মাঠে একে একে হাজির হতে শুরু করেন প্রবীণেরা। চারিদিকে ছড়ানো চেয়ার বসে শুরু হয় আড্ডা। কেউ পৌঁছে যান রান্নার তদারকি করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় লুচি, আলুর দম খাওয়া। সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা চা। খাওয়া মিটতে গান, গল্পের জোরও বেড়ে যায়। অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতা সরকারেরা গান শুরু করেন। অনেকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। দুপুরের মেনুতে ছিল, ভাত, মুগের ডাল, বেগুনি, পনির, মাংস, চাটনি, পাঁপড় ও মিষ্টি।

খাওয়ার পরে মিঠে রোদে গা এলিয়ে শুরু হয় পুরনো দিনের গল্প। নতুনপল্লির বাসিন্দা দীপ্তেন্দ্র নারায়ণ শীল বলেন, ‘‘অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হল। কলেজ জীবনের দুষ্টুমি নিয়ে হাসিঠাট্টা হল। এটাই তো বড় পাওয়া।’’ বড়বাজারের আশি বছরের দ্বারকা কর্মকার, দিলীপকুমার ঘোষ, অশোককুমার রায়েরা বলেন, বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে এক দিনে বয়স কমে গেল।’’ পিকনিকে ছিলেন সমাজকর্মী শান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘খোলা মাঠ, আকাশের নীচে আড্ডা দিয়ে দেহ-মনে প্রচুর অক্সিজেন নিলাম।’’ ছিলেন বাদামতলার রেনুকা হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘একাই থাকি। এ বার আবার কবে দেখা হবে, এটা ভেবে বাঁচব।’’ বিবেকানন্দপল্লির বনবিহারী মণ্ডল সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন অসুস্থ স্ত্রীকে। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী মানসিক রোগে ভুগছে। কয়েকমাস বাড়ি থেকে বেরোনি। আজকে জোর করে নিয়ে এসেছি। ওর হাসি দেখে কী যে মনে হচ্ছে বোঝাতে পারব না।’’

চড়ুইভাতির উদ্যোক্তা, বর্ধমান শহরের প্রাক্তন কাউন্সিলর খোকন দাস বলেন, ‘‘এত প্রবীণ মানুষকে এক জায়গায় পাওয়া কি কম কথা। আমি ভাগ্যবান তাঁরা আমাদের ডাকে এসেছেন।’’ তিনি জানান, কাঞ্চননগরে ১০০ শয্যার একটি পাঁচতলা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা হয়েছে। অসহায় প্রবীণরা বিনামূল্যে থাকতে পারবেন সেখানে। ‘নবনীড়’ নামে ওই বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালনা করবে ট্রাস্টি বোর্ড।

পিকনিকে আসা বৃদ্ধরাও জানান, অনেকের ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকে, আলাদা থাকে। সবসময় সাহায্য চাইলেও মেলে না। তাই নিজেরাই নিজেদের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্কল করেছেন তাঁরা। দুটি অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন। তাঁদের সমবেত উচ্ছ্বাস, ‘‘উই আর রিটায়ার্ড, বাট নট টায়ার্ড।’’

Picnic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy