Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Ex captive

কালী প্রতিমার হাত ধরে আলোর পথযাত্রী তপন

তপনবাবু জানান, তিনি আলিপুর জেলে ১০ বছর ছিলেন। সেই সময়ে এক সহবন্দি শিল্পীর কাছে সিমেন্ট-বালি দিয়ে ভাস্কর্য, মাটির নানা সামগ্রী তৈরি প্রভৃতি কাজ শিখে নেন। দিল্লির তিহাড় জেলের একটি অনুষ্ঠানে তিনি আনাজের নানা মডেল ও শিশুকে স্নান করাচ্ছেন মা, এমন মডেল তৈরি করে প্রশংসিত হন।

ব্যস্ত তপন বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র।

ব্যস্ত তপন বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০২:০৪
Share: Save:

‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’— অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে চলো। এই অর্থের সঙ্গে যেন মিল খুঁজে পাওয়া যায় বছর পঁয়তাল্লিশের তপন বাউড়ির। কারণ, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আলোর পথে ফিরতে তিনি কালী প্রতিমা গড়ায় মন দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি খুনের মামলায় ২০০৪ সালে কারাদণ্ড হয় দুর্গাপুরের নডিহার বাসিন্দা তপনবাবুর। সাজা ঘোষণার পরে, স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। জেল থেকে ছাড়া পান এ বছর ৭ জানুয়ারি। বাড়ি ফিরে তিনি কিছুদিনের মধ্যে বিধবা-বিবাহ করেন। তার পরে সংসার চালাতে তপনবাবু বেছে নেন এই প্রতিমা তৈরির পেশাকে।

কী ভাবে নিজেকে শিল্পী হিসেবে তুলে ধরলেন? নডিহায় টালির চালের ছোট্ট বাড়ি। বৃষ্টি আটকাতে চালে পলিথিন। দু’টি ঘরের একটিতে থাকেন ওই দম্পতি। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কল্পনাদেবী জনমজুর খেটে রোজগার করেন। এখন ধান কাটার কাজ করছেন তিনি। তপনবাবু রোজগারের জন্য বেছে নিয়েছেন তাঁর শিল্পীসত্ত্বাকে। জেল থেকে বেরিয়ে স্থানীয় মনসা মন্দিরে মনসা প্রতিমা গড়বেন বলে ভেবেছিলেন তপনবাবু। কিন্তু করোনা আবহে ঘটে-পটে পুজো হয়। প্রতিমা হয়নি। তার পরে কালী প্রতিমা গড়বেন বলে ঠিক করে নেন।

তপনবাবু জানান, তিনি আলিপুর জেলে ১০ বছর ছিলেন। সেই সময়ে এক সহবন্দি শিল্পীর কাছে সিমেন্ট-বালি দিয়ে ভাস্কর্য, মাটির নানা সামগ্রী তৈরি প্রভৃতি কাজ শিখে নেন। দিল্লির তিহাড় জেলের একটি অনুষ্ঠানে তিনি আনাজের নানা মডেল ও শিশুকে স্নান করাচ্ছেন মা, এমন মডেল তৈরি করে প্রশংসিত হন। মাঝেমধ্যে বর্ধমান জেলেও আসতেন। সেখানে কালী প্রতিমা বানিয়েছেন। এক আধিকারিকের বাড়ির জন্য বুদ্ধমূর্তি বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন সাধারণ উচ্চতার পাঁচটি মূর্তির বরাত পেয়েছি।’’

তাঁকে কালী প্রতিমা তৈরিতে সহযোগিতা করছেন পাড়ার ছেলে পরেশ বাগদি। এ ছাড়া, নডিহার ২৬ ফুটের ষোলোআনা কালী প্রতিমাও তিনিই তৈরি করছেন। শ্যামপুর এলাকার পল্লিমঙ্গল কালী মন্দিরে প্রতিমা রং করার কাজের বরাতও তিনি পেয়েছেন। তাঁর কাজ দেখে খুশি মন্দিরের পুরোহিত দীপ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘উনি সত্যিই ভাল শিল্পী। সংশোধনাগারের গল্প তাঁর কাছে অনেক শুনেছি। উনি যে নিজের উদ্যোগে রোজগারের চেষ্টা করছেন, দেখে ভাল লাগছে।’’ দুর্গাপুরের সংশোধনাগারের আধিকারিক মৃণ্ময় কর বলেন, ‘‘উনি প্রতিমা তৈরি করছেন বলে শুনেছি। নিজের চোখে দেখিনি। সৎ পথে থেকে রোজগার করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে সব সময় স্বাগত জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ex captive Clay artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE