পাহাড় চড়তে গিয়ে যুদ্ধ-পরিস্থিতির মধ্যে আটকে পড়েছেন ইরানে। তবু প্রাণ হাতে করে মঙ্গলবার রাতে এসে পৌঁছেছিলেন ইরান ও আজ়ারবাইজানের আস্তরা সীমান্তে। কিন্তু ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার জেরে এখনও ইরান ছেড়ে বেরোতে পারলেন না কলকাতার উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজের ভূগোলের শিক্ষক ফাল্গুনী দে। তেহরান থেকে গাড়িতে প্রায় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পড়শি দেশ আজ়ারবাইজানের দোরগোড়ায় এসে আপাতত থমকে যেতে হয়েছে আউশগ্রামের বাসিন্দা ফাল্গুনীকে।
সীমান্তে পৌঁছে ফাল্গুনী জানতে পেরেছেন, স্থলপথে পড়শি দেশে ঢুকতে ই-ভিসা নয়, লাগবে অভিবাসন কোড। আর তা পেতে সময় লাগতে পারে ১৫ দিন! ফলে আপাতত দেশে ফেরার অপেক্ষায় সীমান্তের টার্মিনালের লবিতে রাত কাটাচ্ছেন বছর চল্লিশের ফাল্গুনী। বুধবার ফোনে বললেন, ‘‘আমরা এখন দলে অনেকে আছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন, যুদ্ধকালীন সময়েও অভিবাসন কোড পেতে ১৫ দিন কেন লাগবে?’’ বিকল্প হিসাবে ৮-১০ ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে আর্মেনিয়া সীমান্তে যাওয়ার উপায় থাকলেও তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি ফাল্গুনী। কারণ, সেখানেও একই সমস্যা হতে পারে।
গত সোমবার মাঝরাতে তেহরান থেকে গাড়িতে সীমান্তের দিকে যাত্রা করার সময়ে ফাল্গুনীর ধারণাই ছিল না যে নতুন গেরোয় পড়তে চলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আজ়ারবাইজানে ঢুকতে ই-ভিসার আবেদন করেছিলাম তেহরানে থাকতেই। দ্রুত ভিসা পেতে অতিরিক্ত ২০০ ডলার খরচ হয়েছে। আজ়ারবাইজানের বাকুতে হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে মুম্বই পর্যন্ত উড়ানের টিকিটও দেখাতে হয়েছে। অথচ সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে জানতে পারি, স্থলপথে ওই দেশে ঢুকতে ই-ভিসা নয়, অভিবাসন কোড লাগবে। যা পেতে দিন ১৫ লাগবে! এটা আগে কেউ জানাননি। ২০ হাজার টাকার ই-ভিসা জলে গেল।’’
হাতের টাকা ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে। তেহরানে অতিরিক্ত কয়েক দিনের হোটেলের ভাড়া থেকে শুরু করে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছনোর গাড়ি খরচ, ই-ভিসার খরচ— সবই জুগিয়েছে অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা। দেশে ফিরে সেই অর্থ চোকাতে হবে ফাল্গুনীকে। অর্থ বাঁচাতে হোটেলের বদলে টার্মিনালের লবিতেই স্লিপিং ব্যাগে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
আউশগ্রামের বাসিন্দা ফাল্গুনীর বাবা কার্তিকচন্দ্র দে জানান, চলতি মাসের প্রথম দিকে ইরানের দামাভান্দ আগ্নেয়গিরি (৫৬০৯ মিটার) অভিযানে যান ফাল্গুনী। খারাপ আবহাওয়ার জন্য শীর্ষের ৪০০ মিটার নীচ থেকে ফিরে এলেও বিপত্তি শুরু হয় তেহরানে পৌঁছনোর পরে। ইরান ও ইজ়রায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এবং ইরানের আকাশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছ’দিন তেহরানের হোটেলেই আটকে ছিলেন। হোটেল ছেড়ে গত সোমবার রাত কাটান একটি মসজিদে। এর পরে দিনের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়েন। তেহরানের ভারতীয় দূতাবাসের ব্যবস্থার উপরে ভরসা না করে, নিজের অভিযান আয়োজক সংস্থার সাহায্যে এগিয়ে যান আস্তরা সীমান্তের দিকে।
কেমন ছিল সেই যাত্রা? ‘‘পদে পদে গাড়িতে খানাতল্লাশি হয়েছে। তেলের ঘাটতি শুরু হওয়ায় কোনও গাড়িতে একবারে ১০-২০ লিটারের বেশি তেল দিচ্ছে না। ফলে বার বার গাড়ি থামাতে হয়েছে। তবে এ দিকে তেমন হামলা হয়নি। কারণ, ইরানের সাধারণ মানুষ ইজ়রায়েলের লক্ষ্য নয়।’’— বলছেন ওই শিক্ষক। তাঁর হতাশা, ‘‘কবে কলকাতা ফিরব, জানি না। শরীর-মন, দু’টোই ক্রমশ ভেঙে পড়ছে।’’
সহ প্রতিবেদন: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)