Advertisement
E-Paper

ছাত্র খুনই, মনে করছে পরিবার

দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয়। দুর্গাপুরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র (এনআইটি) কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অমিত কুমার (১৯) খুন হয়েছেন বলেই অভিযোগ করল তাঁর পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪০
হস্টেলে তদন্তে পুলিশ। ইনসেটে, মৃতের বাবা অশোক কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

হস্টেলে তদন্তে পুলিশ। ইনসেটে, মৃতের বাবা অশোক কুমার। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা নয়। দুর্গাপুরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র (এনআইটি) কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অমিত কুমার (১৯) খুন হয়েছেন বলেই অভিযোগ করল তাঁর পরিবার। শনিবার উত্তরপ্রদেশের আগরা থেকে এনআইটি-তে এসে এই অভিযোগ করেন অমিতের বাবা অশোক কুমার। রাত পর্যন্ত অবশ্য পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

শুক্রবার সকালে এনআইটি’-র নিরাপত্তা রক্ষীরা পাশের হস্টেল চত্বরে অমিতের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। অমিত থাকতেন তিন নম্বর হস্টেলে। পাশে বিদেশি ছাত্রদের হস্টেল। সেই হস্টেলেরই চত্বর থেকেই অমিতের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মহকুমা হাসপাতালের মর্গে সমস্যা থাকায় অমিতের দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের মর্গে। আজ রবিবার সেখান থেকেই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। দেহের ফরেন্সিক পরীক্ষাও করা হবে।

অমিতের গলার দু’পাশে তিনটি এবং দুই হাতে তিনটি কাটার চিহ্ন দেখা গিয়েছে। তবে কোনও ক্ষতই গভীর নয়। প্রাথমিক ভাবে অমিত আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল। তবে এ দিন অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলে আত্মহত্যা করতেই পারে না। তা ছাড়া, পুলিশের কাছে ছেলের ছবি দেখে মনে হয়েছে, এ ভাবে কেউ এতবার ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে না। ক্ষতগুলিও অগভীর। খুনের ঘটনা বলেই আমরা মনে করছি।’’ তিনি জানান, জন্মাষ্টমীর আগের দিন ভূমিকম্পের সময় অমিত তাঁকে শেষবার ফোন করেছিলেন। তিনি ছেলেকে আশ্বস্ত করেন। কম কথার ছেলে অমিত আর কথা বাড়াননি। ফোন কেটে গিয়েছিল। শুধু অশোকবাবু নন, দিল্লির কলেজ পড়ুয়া অমিতের দাদা অলোক, দিদি দিব্যা বলেন, ‘‘ভাই কোনও ভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। আর ওর দেহের ছবি দেখে মনেই হচ্ছে না ও আত্মঘাতী হয়েছে। আমরা ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত চাই।’’

এনআইটি-র ডিন (স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার) অনুপকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অমিতের পরিবারের লোকজন এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের মতো আমরাও চাই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হোক। সত্যি বেরিয়ে আসুক।’’ পুলিশের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘কিছু খটকা অবশ্য রয়েছে। অমিতের দেহ যেখানে মেলে, সেখানে রক্তের দাগ কার্যত ছিল না। অথচ রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হলে, রক্তের অনেক বেশি দাগ থাকা উচিত। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সেই মতো এগোনো হবে।’’

এ দিন দুপুরে অমিতের পরিবারের লোকজন এনআইটি-তে এসে প্রথমেই দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন পুলিশের সঙ্গে। তখনও অমিতের মা শাওনশ্রী জানতেন না অমিত মারা গিয়েছেন। তাঁকে ছেলে অসুস্থ বলে নিয়ে আসা হয়েছিল দুর্গাপুরে। কিন্তু এখানে এসে আসল ঘটনা জানার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে এনআইটি-র মেডিক্যাল ইউনিটে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। বিকেলে পরিবারের বাকিরা যান হস্টেলে অমিতের ঘরে। সেখানে সহ-আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। দিব্যা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অমিতের কাগজপত্র, ডায়েরি, ল্যাপটপ দেখেন। অশোকবাবু ও তাঁর ভাই ব্রিজেশবাবু সহ- আবাসিকদের কাছে বারবার জানতে চান ঘটনার কথা। তবে সে ভাবে কেউ কিছু বলতে পারেননি। সহ-আবাসিকরা জানান, গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা অমিতকে ঘরে দেখেছেন। তবে সন্দেহজনক কিছু নজরে আসেনি।

দিব্যা হস্টেলের বাইরে এসে এক সহপাঠীকে জিজ্ঞাসা করেন, অমিতের কোনও সমস্যা সম্প্রতি তাঁর নজরে এসেছিল কি না। ওই সহপাঠী জানান, সমস্যা একটা ছিল। তবে তা কী, অমিত খোলসা করেননি। এ দিন যাওয়ার আগে অশোকবাবু ফের বলে যান, ‘‘আমার ছেলে আত্মহত্যা করতেই পারে না। আর একটু দেখে নিয়ে আমরা খুনের অভিযোগ দায়ের করব।’’

NIT Murder Police investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy