প্রথমে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরে বেসরকারি নার্সিংহোম।— দু’জায়গাতেই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ। তার পরে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে গিয়ে রোগ যখন ধরা পড়ল, তখন জানা গেল কেতুগ্রামের মাসুন্দির বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর মাধাই মাঝির ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসা শুরুর আগেই ঘটি-বাটি বন্ধক দিতে হয়েছে মাঝি পরিবারকে। এই পরিস্থিতিতে মাধাইবাবুকে বাঁচাতে চাঁদা তুলতে নেমে পড়েছেন চারটি গ্রামের যুবকের।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে আটত্রিশ বছরের মাধাইবাবু বাঁ পায়ে আচমকা ব্যথা অনুভব করেন। মাধাইবাবুর স্ত্রী হিরন্ময়ীদেবীর দাবি, গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে বলা হয়, ‘ফোঁড়া হয়েছে।’ সেই মতো ছ’মাস ধরে চিকিৎসা চলে। কিন্তু তাতে ফল মেলেনি। এর পরে হাওড়ার শিবপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় মাধাইবাবুকে। সেখানে বলা হয় ‘বোন টিবি’ হয়েছে। পরিবারের দাবি, ওই নার্সিংহোমের খরচ মেটাতে গিয়ে ঘরের ১০ কাঠা জমি মাত্র কুড়ি হাজার টাকায় বন্ধক দিতে হয়েছে। কিন্তু সাড়ে চার বছর ধরে সেখানে চিকিৎসা করিয়েও ফল না মেলায় এক পড়শির পরামর্শে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মাধাইবাবুকে। হিরন্ময়ীদেবীর দাবি, ‘‘বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওনার ভুল চিকিৎসা হয়েছে। আসলে ওনার ক্যানসার হয়েছে।’’
তবে ভুল চিকিৎসার কোনও অভিযোগ করেননি মাধাইবাবুর পরিবার। কেন? হিরন্ময়ীদেবীর দাবি, ‘‘দুই ছেলেকে নিয়ে প্রায় পথে বসেছি। এখন আর অভিযোগ জানানোর সামর্থ্য, সাহস কোনওটাই নেই।’’
পরিবারটির দাবি, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে পায়ে। কিন্তু তার জন্য খরচ পড়বে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। মাটির বাড়ির বসে মাধাইবাবুর মা জয়াবতীদেবীর আক্ষেপ, ‘‘ছেলের চিকিৎসার জন্য ছাগল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে।’’
তবে পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজুর, মাসুন্দি, বহড়া, রাজখাঁড়া গ্রামের প্রায় ৫০ জন যুবক। শুক্রবার বিকেলে চাঁদা সংগ্রহ করতে করতেই স্থানীয় যুবক পলাশ মণ্ডল, দেবাশিস মাঝিরা বলেন, ‘‘মাধাইকে সারাতে না পারলে গোটা পরিবারটা পথে বসবে। তা কিছুতেই হতে দেব না আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy