উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পশ্চিম বর্ধমানের পাঁচ পর্যটক মারা গিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হতেই পরিবারগুলিতে এবং এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের কারও ছিল বেড়ানোর নেশা। কেউ বা চেয়েছিলেন ছেলের সঙ্গে দিল্লিতে দীপাবলি কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে।
ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রানিগঞ্জের সিহারসোলের কিশোর ঘটক, চন্দনা খান, আসানসোলের শ্রাবণী চক্রবর্তী এবং দুর্গাপুরের দম্পতি সুব্রত ভট্টাচার্য এবং রুনা ভট্টাচার্যের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের ধান্ডাবাগের রবীন্দ্রপল্লিতে থাকতেন সুব্রত ও রুনা। পেশায় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের হুইল অ্যান্ড অ্যাক্সেল প্ল্যান্টের প্রাক্তন কর্মী সুব্রত এবং তাঁর স্ত্রী রুনা প্রায়ই বেড়াতে যেতেন বলে পড়শিরা জানিয়েছেন। এ বার বেরিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন। ফেরার কথা ছিল ৩১ অক্টোবর।
ঘটনার কথা জেনে পড়শি কাকলি ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁরা আমাদের পরিবারেরই এক জন। বুধবার রাতভর ওই দম্পতির ছেলে সুদীপ্তকে ঘটনার কথা জানাতে পারিনি।” তবে বৃহস্পতিবার সকালে সুব্রত জানতে পেরেছেন বাবা-মা ও পিসি চন্দনা আর বেঁচে নেই। তিনি কোনও রকমে বলেন, “আমাদের তিন আত্মীয় গিয়েছেন দেহ আনতে।” এ দিকে, ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবারই ওই বাড়িতে এসেছেন আত্মীয় শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের আত্মীয়রা উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কিন্তু আবহাওয়া খুব খারাপ থাকায় ওঁরা দিল্লিতে আটকে রয়েছেন।”
এ দিকে, আসানসোলের মহিশীলার শ্রাবণী চক্রবর্তী ও তাঁর স্বামী যদুনাথ চক্রবর্তীও বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ দিন তাঁদের বাড়ি তালা বন্ধ ছিল। যদুনাথ জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বুধবার থেকে ওই বন্ধ বাড়ির সামনে দেখা গিয়েছে পড়শিদের জটলা। সেই জটলারই এক জন, ঈশিতা সিংহ বলেন, “বেড়াতে যাওয়ার আগে, শ্রাবণীদি বলেছিলেন, দিল্লিতে ছেলের বাড়িতে দীপাবলি কাটিয়ে আসানসোলে ফিরবেন। কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল!”
পাশাপাশি, মৃত্যু হয়েছে রানিগঞ্জের সিহারসোলের বাসিন্দা, তথা জেলার পরিচিত সিটু নেতা কিশোর ঘটকের। কিশোর সমাজসেবী হিসাবেও পরিচিত ছিলেন এলাকায়। তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী সঞ্জয় প্রামাণিক জানান,
দুঃস্থদের চিকিৎসা, মেয়ের বিয়ে থেকে পড়াশোনায় সাহায্য করতেন কিশোর। স্থানীয় বাসিন্দা পুষা কোড়া তাঁর আত্মীয়ের বিয়েতে, রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের ছাত্রী কঙ্গনা ধীবর তাঁর কলেজে ভর্তির বিষয়ে কিশোরের সাহায্যের কথা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার। রোহিত মীর নামে এক জন জানান, কিশোর তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তৃণমূল নেতা কাঞ্চন তিওয়ারি থেকে সিপিএম নেতা রুনু দত্ত, সকলেরই বক্তব্য, “রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ছিল, কিশোরের ছিল সমাজসেবী পরিচয়। এলাকার অপূরণীয় ক্ষতি হল।” এ দিন কিশোরের বাড়ির সামনে তাঁর স্মৃতিতে দেওয়াল লিখতেও দেখা যায় সিপিএম-কে। আজ, শুক্রবার দেহ বিমানে করে আনা হতে পারে, এমনটাই পুলিশ সূত্রে তাঁরা জানতে পেরেছেন, দাবি কিশোরের পিসতুতো দাদা কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের জেলা কমিটির সদস্য চন্দনা খানের। তাঁর স্বামী টিপু খান জখম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার টিডিবি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ‘জিএলআই’ পদে কর্মরত চন্দনার আবাসন তালা বন্ধ দেখা গিয়েছে। কলেজ চত্বরে ভিড় জমান পড়ুয়ারা। কলেজের অধ্যক্ষ আশিস দে বলেন, “আমরা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। কলেজের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, করা হবে।” বিজ্ঞানমঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক কল্লোল ঘোষ জানান, চন্দনার আত্মীয়রা দেহ আনতে উত্তরাখণ্ডে গিয়েছেন।
যে ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে পর্যটক-দলটি উত্তরাখণ্ডে গিয়েছিল, সেটির কর্ণধার নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তাঁরা সামা গ্রামেরই একটি হোটেলে দু’কামরার ঘরে রয়েছেন। পর্যটক দলের সদস্য আসানসোলের কঙ্কন রায় জানান, ৩০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁদের ট্রেন ধরার কথা। সে জন্য শুক্রবার ভোর ৬টার মধ্যে সামা গ্রাম থেকে তাঁদের রওনা দিতে হবে।