বছর দুয়েক আগে অজয় নদের জলের চাপে মঙ্গলকোটের কোঁয়ারপুরে বাঁধের একাংশ ভেঙে গিয়েছিল। এর জেরে মাজিগ্রাম, ভাল্যগ্রাম ও কোশিগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার বিঘে কৃষি জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পরে বন্যার জল নেমে গেলেও জমিতে পুরু হয়ে বালির স্তর জমে যায়। তারপর থেকে ওই জমিতে চাষ করা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বহু চাষি। অভিযোগ, কোনওরকমে জোড়াতালি ওই বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়নি। চাষিদের দাবি, প্রশাসনের তরফে বাঁধটি উপযুক্তভাবে নির্মাণ করার পাশাপাশি জমি থেকে বালি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। না হলে জমি থেকেও চাষ করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ফি বছর অজয় নদের জল বাড়লে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দেয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর জল বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোঁয়ারপুর এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রায় দু’হাজার মিটার নদী বাঁধ ভেঙে পড়ে। অনেক কাঁচা বাড়ি ভেঙে যায়। পাশাপাশি এলাকায় কয়েক হাজার বিঘে জমি দীর্ঘদিন জলমগ্ন হয়েছিল। পরে জল নেমে গেলেও জমিতে মোটা বালির আস্তরণ পড়ে যায়। স্থানীয় চাষিদের একাংশ কোনওরকমে বালি সরিয়ে কিছু অংশে চাষ করলেও এখনও অধিকাংশ জমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এলাকার অনেক চাষিই নিজের জমি থাকতেও চাষ করতে না পেরে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
কোঁয়ারপুর গ্রামের এক্স জমিনদারি এলাকার বাসিন্দা সুভাষ মাঝি বলেন, “বছর দুয়েক আগে আমাদের এলাকার বাঁধ ভেঙে গেলেও প্রশাসন সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি। এ বছরও বর্ষার সময়ে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। ফের জমিতে বালি জমলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।”
খেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা তাপস ঘোষ বলেন, “আমাদের এলাকার জমি খুবই উন্নতমানের ছিল। সারা বছর চাষ হত। কিন্তু বন্যায় বালির আস্তরণ পড়ে বিঘে পর বিঘে জমি পতিত হয়ে গিয়েছে। বালি সরিয়ে চাষ করার ক্ষমতা আমার নেই। সরকারি ভাবে বালি সরিয়ে না দিলে আর চাষ করতে পারব না। বর্তমানে নিজের জমি থাকতেও দিনমজুরের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালাচ্ছি।”
মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “ওই এলাকায় চাষের জমি থেকে বালি সরিয়ে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হবে। বাঁধ মেরামতের বিষয়টি নিয়েও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।আশা করছি দ্রুত কাজ হবে।” মহকুমাশাসক (কাটোয়া) অর্চনা পন্ধরিনাথ ওয়াংখেড়ে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)