Advertisement
E-Paper

পিকনিক গিয়ে দুর্ঘটনা, নতুন বছরে শোকের ছায়া আসানসোলে

রবিবার পিকনিকে গিয়ে স্নান করতে নেমে বার্নপুরের সূর্যনগরে দামোদরে তলিয়ে যান ওই দুই পাড়ার বাসিন্দা প্রতীক নন্দী (২৫), রাহুল দেবনাথ (২৩), পরিচয় চট্টোপাধ্যায় (২৩), সিন্ধু কাজি (২০) ও দেবব্রত রায় (২৩)।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
—নিজস্ব চিত্র

—নিজস্ব চিত্র

এলাকার পাঁচ ছেলে দামোদরে ডুবে গিয়েছে। রবিবার রাতের দিকে এই খবরটা ছড়াতেই আসানসোলের পাশাপাশি দুই পাড়ায় মুহূর্তে ফিকে হয়ে গেল বর্ষশেষের আনন্দ। তার জায়গা নিল চাপা উদ্বেগ। আশঙ্কা সত্যি করে, সোমবার, নতুন বছর শুরুর দিন পাঁচ জনেরই দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই আসানসোলের শ্রীপল্লি ও হিলভিউতে শোকের ছায়া।

রবিবার পিকনিকে গিয়ে স্নান করতে নেমে বার্নপুরের সূর্যনগরে দামোদরে তলিয়ে যান ওই দুই পাড়ার বাসিন্দা প্রতীক নন্দী (২৫), রাহুল দেবনাথ (২৩), পরিচয় চট্টোপাধ্যায় (২৩), সিন্ধু কাজি (২০) ও দেবব্রত রায় (২৩)। রবিবার রাতেই প্রাথমিক তল্লাশি কাজ শুরু হয়। ওই দিন কারও সন্ধান মেলেনি। সোমবার সকাল ৭টা থেকে ফের দামোদরে তল্লাশি শুরু হয়। প্রথমে উদ্ধার হয় সিন্ধু ও দেবব্রতর দেহ। তার ১০ মিনিটের মাথায় প্রতীক, রাহুল ও পরিচয়ের দেহ মেলে।

পাড়ার ছেলেদের মৃত্যুর খবর শোনামাত্র সোমবার বর্ষবরণের যাবতীয় অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয় এলাকার ক্লাবগুলি। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন রায় বলেন, ‘‘কী ভাবে উৎসব হবে বলুন তো? ওই ছেলেগুলোই তো যে কোনও অনুষ্ঠানে এগিয়ে আসতো সবার আগে।’’ এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের সদস্য বা পড়শিরা, প্রায় কেউই কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সোমবার কাকভোরে বাড়ির লোক জন, পরিচিতেরা পৌঁছে গিয়েছিলেন দামোদরের পাড়়ে। একে একে যুবকদের দেহ উদ্ধার হতেই দামোদরের পাড়ে কান্নার রোল। বুক চাপড়াতে চাপড়াতে দেবব্রতর বাবা নারায়ণচন্দ্র রায় বারবার বলছিলেন, ‘‘ছেলে আর ফিরবে না, ছেলে আর ফিরবে না..।’’ ছেলের ময়না-তদন্ত করাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন প্রতীকের মা কেয়া নন্দী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি কথা বলতে পারেননি।

ময়না-তদন্তের পরে ওই যুবকদের দেহ দুপুরে স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে আনা হয়। সেখানেই তাঁদের শ্রদ্ধা জানান পা়ড়ার লোক জন। এসেছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ওই যুবকদের দেহ নিয়ে শেষ যাত্রায় ভেঙে পড়ে গোটা পাড়া। তবে এ দিন শোকের সঙ্গে পাড়ার লোক জন এবং মৃতের পরিজনদের মুখে বারবার আক্ষেপও শোনা যায়। তাঁদের অনেকেই আক্ষেপ করেন, ‘‘কেন যে অমন পাণ্ডববর্জিত এলাকায় পিকনিকে গেল ওরা!’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত পাঁচ যুবকই উচ্চশিক্ষিত। তাঁরা প্রত্যেকেই আসানসোল ও লাগোয়া নানা এলাকায় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। যে ১২ জন বন্ধু রবিবার পিকনিকে গিয়েছিলেন, তাঁদের কয়েক জন জানান, বছর শেষের দিনটা আনন্দে কাটাতেই পিকনিকে যান। পুলিশের দাবি, পিকনিক সেরে সকলে গাড়়িতেও ওঠেন। কিন্তু কয়েক জন ‘স্নান করবো’ বলে গাড়ি ঘোরান।

প্রশাসনের কর্তাদের মতে, এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটল সচেতনতার অভাবেই। তাঁদের দাবি, যেখানে পিকিনিক করতে গিয়েছিলেন প্রতীক, রাহুলরা, তার অদূরেই রয়েছে পাম্পহাউস ও বালিঘাট। এই ধরনের এলাকায় সাধারণ ভাবে জলে ঘুর্ণি থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের নদীতে স্নান করাও নিষিদ্ধ। তার পরেও স্রেফ হুজুগের ঠ্যালায় নদীতে নামাটাই কাল হল ওই পাঁচ যুবকের। রাহুলের বাবা রবীন্দ্রনাথ দেবনাথেরও আক্ষেপ, ‘‘ওরা আর একটু সাবধান হলে আমাদের আজ এ দিনটা দেখতে হতো না।’’

শ্রীপল্লি ও হিলভিউ এলাকার অনেক বাসিন্দাই বলছেন, ফি-বছর পিকনিকের হুল্লোড়ের মধ্যে এমন দুর্ঘটনার কথা রাজ্যের কোথাও না কোথাও শোনা যায়। কিন্তু, ছবিটা বদলাচ্ছে না। নজরদারিও থাকছে না সে ভাবে। প্রশাসন আরও কঠোর হাতে নিয়ম মানাক উৎসবের দিনগুলিতে, এমনটাই দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Asansol Damodar river Damodar drowned
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy