দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে জ্বলছে গাড়ি। কেউ জানালার ফাঁক দিয়ে হাত টেনে, কেউ পাশ দিয়ে পা টেনে বার করার চেষ্টা করছেন বছর তিরিশের যুবককে। তবে কোনও ভাবেই নড়ানো যাচ্ছে না গাড়ির চালকের আসনে বসে থাকা তাঁকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুমড়ে, মুচড়ে যাওয়া গাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ওই যুবক শেখ রফিকুল আলম।
মঙ্গলবার সাতসকালে গলসির গলিগ্রামের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই গাড়িতে থাকা আর এক আরোহী আসমত আলি মণ্ডলকে ভর্তি করানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। মৃত ও আহত দু’জনেরই বাড়ি খণ্ডঘোষের কেঁউদিয়া গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে ওই রাস্তায়। সবটাই ঘন কুয়াশা ও গাড়িতে দাহ্য পদার্থ থাকার ফল, অনুমান পুলিশের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরেই ভোরের দিকে ঘন কুয়াশা হচ্ছে। এ দিন দশ ফুট দূরের জিনিসও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। ভোরে প্রথমে একটি গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে একটি ট্রেলার। গাড়িটি এগিয়ে গেলেও মাঝরাস্তায় থমকে যায় ট্রে়লারটি। পরে ওই ট্রেলারের পিছনেই আরও দুটি গাড়ির সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে রফিকুলদের গাড়ি। ছ’টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রফিকুলদের গাড়িতে ধাক্কা মারে লোহার পাতবোঝাই আর একটি ট্রেলার। আগুন ধরে যায় তখনই। খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় প্রথমে আসমতকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু রফিকুলকে বার করা যায়নি। ঘণ্টাখানেক ধরে আগুন জ্বলার পরে দমকলের একটা ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়। ততক্ষণে ঝলসে যায় রফিকুলের দেহ। উদ্ধার কাজে গলসি থানার এক পুলিশকর্মী অচিন্ত ঘোষ ও স্থানীয় কয়েকজন জখমও হন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় হোটেল মালিক মিলন রায়, গ্যারাজ মিস্ত্রি সুরজ শেখরা বলেন, “কুয়াশের জেরে ১০ ফুট দূরের কোনও জিনিস দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পাই। দেখি একটা গাড়ি ধাক্কা মেরেছে। এর পরেই আরও একটি শব্দ শুনতে পাই। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আগুনে ভরে যায় পুরো এলাকা।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। দু’জনকে বার করার চেষ্টা করি। কিন্তু এক জনকে বাঁচানো গেল।’’ সুরজ বলেন ‘‘একটি দরজা খুলে কোনও রকমে এক জনকে টেনে বার করা যায়। অন্য জন গাড়িতেই
রয়ে গেল।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রফিকুল ও আসমত সম্পর্কে শালা-জামাইবাবু। দু’জনে গ্রামে ফেরি করে কম্বল বিক্রি করতেন তাঁরা। রফিকুলই গাড়ি চালাতেন। এ দিন সকালে গাড়িতে কম্বল চাপিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুর্গাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন দু’জন। আসমতের ভাই জিন্নাত আলি বলেন, “শীতের মরসুমে দু’জনে মিলে কাজে গিয়েছিল। এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।”
দমকল কেন্দ্রের এক আধিকারিকের দাবি, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, গাড়িটিতে উচ্চমানের দাহ্য পদার্থ ছিল। তাতে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে।’’ গাড়িতে কম্বল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, দাবি তাঁদের।