ছ’লক্ষ টনের বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আজ, মঙ্গলবার থেকে ধান কিনতে মাঠে নামছে পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদ্য দফতর। সদ্য শেষ হওয়া মরসুমেও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ধান কিনেছিল খাদ্য দফতর। এ বার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ খরিফ ও ২৫ শতাংশ বোরো মরসুমের ধান কেনা হবে বলে জানা গিয়েছে। গত কয়েক বছরে এই প্রথম সহায়ক মূল্যে নেওয়া ধান থেকে চাল বার করে সব চালকলই সরকারের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, আজ, মঙ্গলবার থেকে জেলায় ৩০টি ধান্য ক্রয় কেন্দ্র চালু হয়ে যাবে। এ মরসুম থেকে জমির পরিমাণ দেখিয়ে চাষিকে ধান বিক্রি করতে হবে। একই সঙ্গে রেশন কার্ড-আধার কার্ডের সংযোগ দেখে একটি পরিবারের একজন চাষিকেই ধান বিক্রির সুযোগ দেবে খাদ্য দফতর। অনলাইনেও ধান বিক্রির দিনক্ষণ বেছে নিতে পারবেন চাষিরা। ফলে, সরকারি সহায়ক মূল্যের ধান বিক্রির দিনক্ষণ ও কেন্দ্র নিজেই ঠিক করার সুযোগ থাকছে। ঠিক করার পরে হঠাৎ করে তা বাতিল করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা বা বিবাহ সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজনে অন্তত তিন দিন আগে ধান বিক্রির তারিখ বাতিল করে পরবর্তী দিন নিতে হবে। না করে নির্দিষ্ট দিনের অন্তত দশ দিন পরে ফের ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন চাষি।
এখনও খেত থেকে সব ধান ওঠেনি। ফলে পুরনো ধান বিক্রির সুযোগও রয়েছে চাষিদের কাছে। খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, চলতি মরসুমে কুইন্টাল প্রতি ধানের সহায়ক মূল্য ২০৪০ টাকা। সেখানে খোলা বাজারে চালের দাম অনেকটাই বেশি। ফলে এখন চাষিদের ধান্য-ক্রয় কেন্দ্রে আসার সম্ভাবনা কম। জেলা চালকল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘চাষিরা কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতেই পারেন। কিন্তু আমরা গুণগত মান দেখে তবেই খাদ্য দফতরের কাছ থেকে ধান নেব।’’
গত মরসুমে সহায়কমূল্যে ধান নেওয়ার পরেও নির্দিষ্ট সময়ে (সেপ্টেম্বর) চাল না দেওয়ায় দু’টি চালকল সংস্থাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। সাড়ে ছ’হাজার টন চাল পাওনা ছিল সেখান থেকে। এক মাস সময় চেয়ে নেন ওই চালকল মালিকেরা। রায়না ২ ব্লকের উচালনের চালকল মালিক গফুর আলি খানের দাবি, শুক্রবারের মধ্যেই বকেয়া চাল শোধ করে দিয়েছেন তিনি। আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘চালকলগুলি চাল পরিশোধ করে দিয়েছে। এ মরসুমে যাতে এ রকম সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা চুক্তিবদ্ধ চালকলগুলিকে সতর্ক ন্য বথাকার জলব।’’
গত মরসুমে জেলার ১০৯টি চালকল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এ মরসুমে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি চালকল চুক্তি করেছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দীর দাবি, ‘‘আশা করা যায় ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় চালকলের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়ে যাবে। আর ওই দু’টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হবে কি না, তা জেলা স্তরের মনিটরিং কমিটি আলোচনা করবে। সেই মতো রাজ্যে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’’
এ দিন কালনায় একটি অনুষ্ঠানে ধান কেনা নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘কেন্দ্র সরকার সহায়ক মূল্যে পঞ্জাব থেকে ১৬৯ লক্ষ টন, হরিয়ানা থেকে ৫৯ লক্ষ টন, উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭২ লক্ষ টন, তেলেঙ্গানা থেকে ১১২ লক্ষ টন এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৮০ লক্ষ টন ধান কেনে। সেখানে এখান থেকে কেনা হয় এক লক্ষ টন ধান। তবে মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টায় এ রাজ্য উচ্চ সহায়ক দরে ধান কিনে নেওয়া হয়। এ বার রাজ্যে ৫৫ লক্ষ টন ধান কেনারপরিকল্পনা রয়েছে।’’