Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Kanksa

‘রোনাল্ডো’র আর্জি, ন্যাড়া নয়, সবুজ মাঠ

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লক জঙ্গলমহল এলাকা বলেই পরিচিত। বিভিন্ন গ্রামের বহু ছেলে ফুটবল খেলে। কয়েকটি ক্লাব দুর্গাপুর মহকুমা স্তরেও দাপিয়ে খেলছে।

দোমড়ায় এমন মাঠেই চলে ফুটবল। নিজস্ব চিত্র
বিপ্লব ভট্টাচার্য
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৫৩
Share: Save:

ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। প্রিয় খেলোয়াড়, তাঁদের জার্সির রং ওঁদেরও ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে সঙ্গে উঠে আসছে পশ্চিম বর্ধমানের গ্রামের ফুটবলের দুর্দশার কথাও। খেলোয়াড়েরা জানাচ্ছেন, বিশ্বকাপ দেখতে-দেখতে যেন একটা মায়ার খেলায় ভেসে যান তাঁরা। কিন্তু পরক্ষণেই গ্রামের ন্যাড়া মাঠ, সাইকেলের দোকান থেকে সেলাই করা ফুটবল দেখে মনখারাপ হয়। তাই, ফুটবল বিশ্বকাপ ওঁদের কাছে মনখারাপেরও!

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লক জঙ্গলমহল এলাকা বলেই পরিচিত। বিভিন্ন গ্রামের বহু ছেলে ফুটবল খেলে। কয়েকটি ক্লাব দুর্গাপুর মহকুমা স্তরেও দাপিয়ে খেলছে। কিন্তু সেই খেলা চালাতে গিয়েই সমস্যা।

কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জের একটি ফুটবল দল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার লিগে চুটিয়ে খেলেছে। সেই দলের কোচ বনমালী দে বলছেন, “ছেলেরা পেশাগত ফুটবলার নয়। সে সুযোগও নেই। কেউ খেতে, কেউ বা কারখানায় দিনমজুরি করে। আর সুযোগ পেলেই ভালবাসার টানে মাঠে আসে। অনেক সময় নতুন ফুটবলও কেনা হয় না। জানি না, এ ভাবে আর কত দিন।” বিশ্বকাপের মরসুমে এ কথাগুলিই মনে হচ্ছে বনমালীর। ফুটবলার পল্টু রায়, শ্যামল রায়েরাও বলেন, “খেলাটা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা অর্থের। কোনও সাহায্য পেলে ভাল করে খেলায় মন দিতে পারি।” ওই গ্রামে একটি মাঠও রয়েছে। কিন্তু মাঠ ঘেরা না থাকায়, গরু, ছাগলের দল ঘাস খেয়ে নিয়েছে। খেলোয়াড়েরা চান, মাঠটা ঘিরে দেওয়া হোক।

কাঁকসার দোমড়ার বাগানপাড়ায় আদিবাসীদের একটি ফুটবল দল রয়েছে। প্রতি বছর তারা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে। প্রাক্তন খেলোয়াড় শুকু মুর্মু, সুনীল হাঁসদারা জানান, গ্রামের ছেলেদের দিকে তাকিয়েই প্রতিযোগিতার আয়োজন। ওই দলেই খেলে রবিন হাঁসদা। গ্রামের ময়দান তাঁকে চেনে, রোনাল্ডো নামে। জেলার নানা প্রান্তে দাপিয়ে খেলে বেড়ানো সেই ‘রোনাল্ডো’ বলেন, “খেলার মাঠে ঘাস নেই। সবুজ মাঠ হলে, খেলাটা খোলে ভাল। ছেলেদের জুতো কেনার টাকা নেই। প্রশাসন একটু নজর দিক। আমরা তাহলে আরেকটু ভাল ভাবে খেলাটাকে আঁকড়ে ধরব।”

পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সমীর বিশ্বাসের অবশ্য আশ্বাস, “খোঁজ নেব। সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করব।”— এই আশ্বাস সম্বল করেই আজ, রবিবার থেকে টেলিভিশনে, মোবাইলের পর্দায় প্রিয় দলের ‘স্কিল’ দেখতে বসবে গ্রামের রোনাল্ডোরা! আশা, হয়তো তাঁরাও এক দিন ‘ড্রিবল’ করতে পারবেন, বিপক্ষকে, যার নাম অভাব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanksa Football fever FIFA World Cup 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE