Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Death

বিষক্রিয়ার কারণ খুঁজতে নমুনা সংগ্রহ খাবারের

মৃতদের পরিবারগুলির অভিযোগ, ওই ভাতের হোটেল থেকে বিক্রি করা দেশি মদে বিষক্রিয়ার কারণেই একের পের এক মৃত্যু হচ্ছে।

চলছে পরিদর্শন।

চলছে পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২২ ০৭:০৫
Share: Save:

দেশি মদের গুণমানের রিপোর্টে ‘অসঙ্গতি’ মেলেনি। অথচ, বিষক্রিয়ায় একাধিক জনের মৃত্যু হল কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সোমবার বর্ধমানের জিটি রোডের কলেজ মোড় এলাকার (লক্ষ্মীপুর মাঠ) ওই ভাতের হোটেলে গিয়ে খাবার, রান্নার মশলারও নমুনা সংগ্রহ করেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের আধিকারিকেরা। হোটেলের মালিককে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস, বিজেপি।

মৃতদের পরিবারগুলির অভিযোগ, ওই ভাতের হোটেল থেকে বিক্রি করা দেশি মদে বিষক্রিয়ার কারণেই একের পের এক মৃত্যু হচ্ছে। এই ঘটনায় প্রথম মারা যান হালিম শেখ। তাঁর ভাই হাবিবুর শেখ হোটেল মালিক গণেশ পাসোয়ানের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় ‘ষড়যন্ত্র করে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে খুনের’ অভিযোগ করেছেন। বিরোধী দলগুলিও হোটেল মালিককে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) কল্যাণ সিংহ রায় শুধু বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’

জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেল মালিক গণেশ পাসোয়ান নিজেও মদ খেয়েছিলেন বলে তাঁদের কাছে দাবি করেছেন। শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি তিনি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও হোটেল থেকে সংগৃহীত বেশ কিছু নমুনার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে, গণেশকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানা গিয়েছে। ওই নার্সিংহোমে গিয়ে গণেশকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে আবগারি দফতর। তাঁদের দাবি, গণেশ তাঁদের জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে দু’পেটি মদ নিয়ে এসে বিক্রি করেছেন তিনি। মদের সঙ্গে কিছু মেশাননি বলেও দাবি করেছেন। জেলা আবগারি দফতরের সুপার এনায়েত রাব্বি বলেন, ‘‘মদের কারণে কারও মৃত্যু হয়েছে, এমন রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।’’

আবগারি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ স্বাস্থ্য দফতরকে ওই হোটেলের খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করার কথা বলে। এ দিন বেলা পৌনে ৪টে থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ওই হোটেল থেকে রান্নার বিভিন্ন রকমের মশলা, তেল, জল, মদের বোতল, সোডার বোতল ও মদ্যপানের গ্লাস নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করে খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরে, বিস্তারিত জানাতে পারব।’’ নমুনা সংগ্রহ চলাকালীন ওই হোটেলে ডিএসপি (বর্ধমান থানা) রাকেশকুমার চৌধুরী, আইসি (বর্ধমান) সুখময় চক্রবর্তী হাজির ছিলেন।

এ দিন দুপুরে আবগারি দফতরের সামনে দেশি মদের বোতল নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় যুব কংগ্রেস। ‘ভাতের হোটেলে মদ, সেই খেয়ে মানুষ বধ’ স্লোগান দেওয়া হয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি গৌরব সমাদ্দারের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের নেতাদের মদত ছাড়া, ভাতের হোটেলে মদ রাখার সাহস কোনও ব্যবসায়ী রাখবেন না।’’ বিজেপিও কার্জন গেটে পথসভা করে। বিক্ষোভও হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ, ‘‘এত জনের মৃত্যু এটাই প্রমাণ করে যে বেআইনি মদের রমরমা বর্ধমান শহর জুড়ে। তৃণমূল নেতাদের প্রশ্রয় ছাড়া, এটা কি সম্ভব?’’ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাসের পাল্টা দাবি, ‘‘বেআইনি মদের বিরুদ্ধে তৃণমূল আন্দোলন করে। কেউ কেউ লুকিয়ে মদ বিক্রি করেন। নজরে এলেই পুলিশ, আবগারি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। মদে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু এমন রিপোর্টও মেলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Hooch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE