Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Moheener Ghoraguli

ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে শিল্পীর পাশে তরুণেরা

অর্ধশতাব্দী আগে কয়েক জনের হাত ধরে পথ চলা শুরু করেছিল প্রথম বাংলা স্বাধীন রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তাপস দাস এখন যুঝছেন ক্যানসারের সঙ্গে।

কালনা কলেজের কাছে গাইছেন তরুণ শিল্পীরা।  নিজস্ব চিত্র

কালনা কলেজের কাছে গাইছেন তরুণ শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৫
Share: Save:

ক্যানসার আক্রান্ত ‘মহীনের আদি ঘোড়া’। কী করেই বা চুপ থাকবেন তাঁর উত্তরসূরীরা। শিল্পীর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে রোজই পথে নামছেন তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা। হাতে গিটার। গলায় গান। রাতে পারদ যতই নামুক না কেন, পরোয়া করছেন না ওঁরা। ক্যানসার-যুদ্ধে জেতাতেই হবে প্রিয় শিল্পীকে।

অর্ধশতাব্দী আগে কয়েক জনের হাত ধরে পথ চলা শুরু করেছিল প্রথম বাংলা স্বাধীন রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তাপস দাস এখন যুঝছেন ক্যানসারের সঙ্গে। বাংলা ব্যান্ডের জগতে ‘মহীনের আদি ঘোড়া’ নামে পরিচিত ষাট পেরোনো তাপসবাবুর ভক্তের সংখ্যা কালনায় নেহাত কম নয়। শিল্পীর অসুস্থতার খবর শুনে অস্থির তাঁরা। সন্ধ্যা নামার পরে, রোজই কালনা শহরের পথে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। গান গেয়ে অর্থ সং‌গ্রহ করছেন তাঁরা।

কালনা শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বেশ কিছু তরুণ-তরুণী। তাঁদের কেউ কলেজ পড়ুয়া। কেউ বেসরকারি সংস্থার কর্মী। কেউ আবার কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সঙ্গীতকে পেশা করেছেন। তাপসবাবুর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনেই তাঁরা শিল্পীর চিকিৎসায় অর্থ সংগ্রহে পথে নামার সিদ্ধান্ত নেন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে থেকে শুরু হয় সে কর্মসূচি। ইতিমধ্যেই ভাগীরথীর ঘাট, সিদ্ধেশ্বরী মোড়, শাহু সরকার মোড়, কালনা কলেজ চত্বর-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের অর্থ সংগ্রহে দেখা গিয়েছে।

রবিবার রাতে কালনা কলেজের সামনে দেখা গিয়েছিল ওঁদের। পাশে ছিল অসুস্থ শিল্পীর ছবি। প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘আমরা যাইনি মরে’। সেখানে কেউ গিটার হাতে, কেউ খালি গায়ে গেয়েছেন ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই।’ কেউ গেয়েছেন, ‘আমি বাংলায় গান গাই।’ পথচারীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন সে সব গান। সামনে রাখা ছিল একটি বাক্স। তাতে কেউ দিয়েছেন ১০০ টাকা। কেউ বা ৫০, দশ বা ২০ টাকা।

ওই শিল্পীদের মধ্যে তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তাপস দাকে আমরা বাপি দা বলে ডাকি। আমাদের মতো ব্যান্ড সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা বাপি দার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আজ উনি অসুস্থ। এক জন শিল্পী হয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য গানকেই বেছে নিয়েছি। বহু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কোনও কোনও দিন এক হাজার টাকা উঠছে। কোনও দিন উঠছে তারও বেশি অর্থ। অনেকে আবার যোগাযোগ করেও অর্থ পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিনের সংগ্রহ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।’’

আকাশ শিকদার, অঙ্কিত দে, শুভজিৎ বিশ্বাস, কুণাল দাস, সুশোভন হালদারের মতো তরুণ শিল্পীরা বলেন, ‘‘এই কর্মসূচি চালিয়ে যাব। বাপি দার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। দেখবেন, বিন্দু-বিন্দু করে ঠিক সিন্ধু হয়ে যাবে।’’

ছুটছে মহীনের ঘোড়াগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moheener Ghoraguli Cancer Patient Rock Band
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE