Advertisement
E-Paper

ছড়ার মানে প্রশ্ন, ভরসা ই-প্রচারে

নোনাধরা দেওয়ালে কয়েক পোচ চুনের গোলা। তার উপরে আঁকা দলের চিহ্ন। এক সময় ভোট প্রচারে দেওয়াল লিখন ছিল রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের একমাত্র অস্ত্র। এখনও ভোট আসলেই দেওয়াল দখল হল যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক কাজ।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৩
কাটোয়ায় ও মেমারিতে দেওয়াল লিখনের ছড়া।—নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়ায় ও মেমারিতে দেওয়াল লিখনের ছড়া।—নিজস্ব চিত্র।

নোনাধরা দেওয়ালে কয়েক পোচ চুনের গোলা। তার উপরে আঁকা দলের চিহ্ন। এক সময় ভোট প্রচারে দেওয়াল লিখন ছিল রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারের একমাত্র অস্ত্র। এখনও ভোট আসলেই দেওয়াল দখল হল যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক কাজ। তবে সেই ব্যস্ততায় এ বার কিছুটা হলেও ভাগ বসিয়েছে সোস্যাল নেটওর্য়াকিং সাইট। রং-তুলি দিয়ে দেওয়াল লেখার সঙ্গেই জমিয়ে চলছে ই-প্রচার।

এ বার কাটোয়া পুরসভা ভোটের প্রচার দেখতে হলে অবশ্যই নজর রাখতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ফেসবুকের দেওয়ালে। সেখানে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপির অনেক প্রার্থী নিয়ম করে ‘পোস্ট’ করছেন প্রচারের ছবি ও প্রতিশ্রুতির খতিয়ান। কাটোয়া, দাঁইহাট, মেমারি, কালনা--এই চারটি পুর এলাকাতেই দেখা মিলছে এই ছবি। কালনা পুরসভায় এক সিপিএম প্রার্থীর কথায়, “এখন টি টোয়েন্টির যুগ। দল ও প্রার্থীর নামে সব সময় ভোট হয় না। নতুন প্রজন্ম অনলাইনে বেশি অভ্যস্ত। তাই ফেসবুক, হোয়্যাটস্ অ্যাপে ছড়া লিখে প্রচার করা হচ্ছে।” মেমারি পুরসভার তৃণমূলের এক প্রার্থীর মতে, “সোস্যাল নেটওর্য়াকিং সাইটে প্রচার করার সময় ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ থাকে।”

কী ভাবে হচ্ছে ই-প্রচার? কংগ্রেস সূত্রে খবর, পুরভোটে ই-প্রচার চালানোর জন্য একটি আলাদা দল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা দলের প্রচার সংক্রান্ত খবর দিচ্ছেন ফেসবুকে। কাটোয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে প্রচার চলছে। কাটোয়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রচারের ছবি দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “বাড়ি বাড়ি যেমন যাচ্ছি, তেমনি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিকেও প্রচারের কাজে ব্যবহার করছি।” তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রাম কিংবা যুব নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে প্রচার করছেন। পিছিয়ে নেই বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপির জেলা নেতা শুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দেওয়াল যুদ্ধে সে ভাবে না গিয়ে আমরা সাইবার দেওয়ালেই প্রচার করছি।” সিপিএমের নেতা-কর্মীরাও তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পুর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তুলে আনছেন সারদা কেলেঙ্কারীর কথা।

তবে একই সঙ্গে সাবেক পদ্ধতিতে দেওয়াল লিখনও হয়েছে। কাটোয়া পুরসভার উন্নয়ন নিয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে ছড়া লিখেছে কংগ্রেস। দাঁইহাটে সিপিএমকে বিঁধে দেওয়াল লিখেছে তৃণমূল। রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়াল লিখেছে তৃণমূল। কোথাও কোথাও চলছে ছড়া-যুদ্ধ। কাটোয়ার কয়েকটি দেওয়ালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে ব্যঙ্গ করে তৃণমূল লিখেছে, ‘‘মনে রেখো সূর্যিমামা/ পাবলিক মুখে ঘসবে ঝামা।’’ পুরভোটের সাফল্য প্রচার করে কংগ্রেস লিখেছে, ‘‘ইলেকট্রিক চুল্লি/ সিটি স্ক্যান/ হাই মাস্টের আলো/ জনগণ বলছে কংগ্রেসই ভাল।’’

দেওয়াল ছাড়াও প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে ফ্লেক্স ও ব্যানার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জানাচ্ছেন, দেওয়াল লেখার ঝক্কি ও খরচ দু’টোই বেশি। তুলনায় ফ্লেক্স অনেক সস্তা। এখানে প্রার্থীর ছবি-সহ প্রচার করা যায়। তাই ভোটের ময়দানে ফ্লেক্সের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে শহরের অনেক প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা অবশ্য এখনও দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রচারের পক্ষপাতী। তাঁদের আক্ষেপ, আগে ভোট প্রচারে অনেক মজার ছড়া দেখা যেত। এখন ছড়ায় সেই মান নেই।

কাটোয়া বাদ দিয়ে জেলার বাকি তিন পুর এলাকার বেশির ভাগ দেওয়ালই তৃণমূলের দখলে। ফ্লেক্স ও ব্যানার প্রচারেও এগিয়ে রয়েছে জোড়াফুল শিবির। জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দেওয়াল দখল নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছে বিরোধীরা।

সোশ্যাল মিডিয়ার অবশ্য দেওয়াল দখল করে নেওয়ার কোনও ভয় নেই। তাই লড়াই এখানে হচ্ছে সেয়ানে-সেয়ানে।

e campaign facebook wall campaign katwa municipality election dainhat election 2015 memari municipality election kalna municipality election soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy