Advertisement
E-Paper

জলের সংযোগ থেকে বিদ্যুৎ, মেলেনি কিছুই

নর্দমাগুলো এখনও পাকা হয়নি। সন্ধ্যা নামলেই লণ্ঠনের টিমটিম করা আলোয় পড়তে বসে পড়ুয়ারা। এলাকার উন্নয়ন হবে, এই ভেবে প্রতি বার ভোটটাও দিয়ে আসেন ওঁরা। কিন্তু আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রিভারসাইড, হস্টেল কলোনি-সহ বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দাদের মনে উঁকি দিচ্ছে পুরনো আশঙ্কাটা— আরও একটা ভোট পেরিয়ে গেল, কিন্তু পরিস্থিতি কি পাল্টাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৮
আসানসোলে এই বস্তিতেই পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। নিজস্ব চিত্র।

আসানসোলে এই বস্তিতেই পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। নিজস্ব চিত্র।

নর্দমাগুলো এখনও পাকা হয়নি। সন্ধ্যা নামলেই লণ্ঠনের টিমটিম করা আলোয় পড়তে বসে পড়ুয়ারা। এলাকার উন্নয়ন হবে, এই ভেবে প্রতি বার ভোটটাও দিয়ে আসেন ওঁরা। কিন্তু আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রিভারসাইড, হস্টেল কলোনি-সহ বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দাদের মনে উঁকি দিচ্ছে পুরনো আশঙ্কাটা— আরও একটা ভোট পেরিয়ে গেল, কিন্তু পরিস্থিতি কি পাল্টাবে?

রিভারসাইড বস্তিতে গিয়ে দেখা গেল বাঁশের কঞ্চি আর মাটির দেওয়ালে ভর করে কোনওক্রমে মাথা তুলেছে গোটা চল্লিশ ঝুপড়ি। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার ছাউনি বলতে এক চিলতে পলিথিন। প্রায় শ’দেড়েক ভোটার রয়েছেন এখানে। সন্ধ্যা হলেই লণ্ঠনের টিমটিম করা আলোয় বা অদূরের ল্যাম্পপোস্টের নীচে পড়তে বসতে হয় বলে জানান বস্তির বাসিন্দা, কয়েক জন পড়ুয়া। তবে পরীক্ষার আগে রাত জাগতে কিন্তু ঢের সমস্যা। কারণ লণ্ঠন জ্বালানোর মতো প্রয়োজনীয় কেরোসিনটুকুও সব সময় মেলে না বলে জানায় ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া পুষ্পা বাউরি। তার আক্ষেপ, ‘‘ঘরে কবে যে বিজলি বাতি আসবে!’’ এলাকায় নিদেন পক্ষে পানীয় জলের সংযোগও নেই বলে অভিযোগ জানালেন বস্তির প্রায় চল্লিশ বছরের বাসিন্দা ধনঞ্জয় বাউরি।

দিন কয়েক আগেও এলাকায় আসা-যাওয়া করতেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। রিভারসাইড বস্তির বাসিন্দা কল্পনা হাড়ির কথায়, ‘‘এ বারও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। সব ভুলে ভোটও দিয়ে এসেছি।’’ কিন্তু ভোট মেটার পর আর কারও দেখা মেলে না অভিযোগ। পেশায় দিনমজুর ধনঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে শেষ বার বিধায়ককে দেখেছিলাম। তারপর এ যাবৎ আর তাঁর দেখা মেলেনি। দেখা মেলে না বিরোধীদেরও।’’

একই হাল বার্নপুরের নেহরু পার্ক যাওয়ার মূল রাস্তা লাগোয়া হস্টেল কলোনি মোড়ের বস্তিটিরও। এখানেও প্রায় একশোটি পরিবারের বাস। জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা— কোনও কিছুই বস্তি এলাকায় তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধের জন্য দরবার করেও হেনস্থার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। প্রায় ৬০ বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছেন ঝর্ণা বাউরি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেশন কার্ড তৈরির আবেদন করলেও টাকা চাওয়া হয়। অনেকের হাতে পায়ে ধরেও এলাকায় উন্নয়ন হয়নি।’’ বস্তিতেই রয়েছে ছোট্ট একটি ডোবা। তার জলেই প্রতিদিনের কাজ সারতে হয় বলে জানান তিনি। পানীয় জলের জন্য বেশ খানিক দূর উজিয়ে যেতে হয় বলে জানান বস্তিবাসীরা। শুধু তাই নয়, পাশেই ঝোপ-জঙ্গল থাকায় বৃষ্টি পড়লেই এলাকায় সাপের উপদ্রবও বাড়ে বলে জানান বস্তিবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা কৃপা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সবাই বিপিএল তালিকাভুক্ত। তৃণমূলের নেতাদের অনুরোধ করেছিলাম সরকারি অনুদানে বাড়ি বানিয়ে দিতে। ভোট পেরিয়ে গেলই আমাদের কথা আর কেউ ভাবে না।’’

যদিও বস্তির অনুন্নয়নের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘রাজ্যে যে ভাবে উন্নয়ন হয়েছে তা থেকে এই এলাকাও বাদ পড়বে না।’’

Asansole Electricity Water
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy