E-Paper

শিক্ষক হয়েও ছাত্রনেতা তিনি

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, তাঁর নির্দেশ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না!

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৫
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

তিনি রাঢ়বঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক। আবার তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের শাসক দলের ছাত্রনেতা। সিপিএমের এক শীর্ষনেতা তাঁকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অলিখিত বস’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কাটোয়া কলেজ থেকে ২০১২-এ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছিলেন তিনি। এখনও তাঁর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। গুঞ্জন শোনা যায়, স্রেফ ছাত্রনেতা তকমা ধরে রাখতেই তিনি একের পর এক বিষয় নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বেই চলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, তাঁর নির্দেশ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ে না! তাঁর ‘প্রভাব’ এমনই যে, বিরোধীরা কেন, টিএমসিপির অন্য ‘গোষ্ঠীও’ গোলাপবাগে পা রাখতে পারে না। জেলা টিএমসিপির একটি অংশ মনে করে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একতরফা ‘রাজ’ চলছে প্রভাবশালীদের। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অর্থ-যোগ‌। ওই ছাত্রনেতার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, তিনি ২০১২ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বিষয়ে পিএইচডিও করেছেন। এমবিএ এবং এলএলবি-তেও ভর্তি হয়েছিলেন। এখন আবার ইউআইটি-তে ‘এম টেক’-এ ভর্তি হয়েছেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে। প্রাক্তনীরা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে হস্টেলগুলি। হস্টেলে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠলেও অ্যান্টি-র‍্যাগিং কমিটির কাছে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সংগঠনের দাবি, শিক্ষক-আধিকারিককে হেনস্থা, শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে অভব্য আচরণ, হস্টেল সুপারিন্টেনডেন্টকে ‘হুমকি’-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ‘সিন্ডিকেট চক্রের’ বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ হলে বা ভর্তির সময় এলে তাদের ‘পোয়া বারো’ হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে।একাধিক অধ্যাপকের দাবি, “ওই সব ছাত্রনেতারা একটি বিষয়ে পাশ করার পরে আবার অন্য বিষয়ে ভর্তি হয়ে যান। স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি করার পরে চাকরির খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন পড়ুয়ারা। কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কয়েক জনের সম্পর্ক যেন আজন্মের! ফলে তাঁদের দাপট কমে না।”

নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। তবু ছাত্র সংসদের প্যাডে সভাপতি ও সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন শাসক দলের নেতারা। টিএমসিপির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নির্বাচন না হলে আগের কমিটিই সংসদ পরিচালনা করবে। সেই মতো শেষ কমিটির সম্পাদক ও সভাপতি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় তাঁরাই সংসদ পরিচালনা করছেন।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক উষসী রায়চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘ আট বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। তবু ছাত্র সংসদের নামে কয়েক জন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বেনিয়ম করে অনুষ্ঠানের নামে ছাত্র সংসদকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা দিচ্ছেন। এই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির অবসান চাইছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আধিকারিক দেবমাল্য ঘোষের কথায়, “মধু খাওয়ার জন্য সংসদের সঙ্গে কয়েক জন এঁটে রয়েছেন। নির্বাচিত সংসদ না থাকলেও কী ভাবে তাদের হাতে অনুষ্ঠানের টাকা পৌঁছয়, তা অবাক করার বিষয়।” তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, উন্নয়ন আধিকারিকদের নিয়ে ‘উৎসব কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে খবর।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বুটা) নেতা ভাস্কর গোস্বামীর কটাক্ষ, “ছাত্র সংসদ এখন কর্মসংস্থানের জায়গা। দীর্ঘদিন ভোট না হওয়ার ফল ভুগতে হচ্ছে।” অনেকের প্রশ্ন, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকার পরেও ‘প্যাড’ ব্যবহার করার অধিকার মেলে কী ভাবে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। শাসক দলের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা অভিষেক নন্দী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুষায়ী ছাত্র সংসদ পরিচালনা করা হয়। বেআইনি কিছু হয় না। যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে স্বৈরাচার আর বেনিয়ম করেছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Burdwan university

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy