Advertisement
E-Paper

কালনায় ফেরি বন্ধে চাপ বাড়ছে গুপ্তিপাড়ায়

রাত ১২টাতেই খবরটা চলে এসেছিল। থানা থেকে ফোন করে বলা হয়, দ্রুত ভুটভুটি নিয়ে কালনা ঘাটে যেতে হবে। সেই মতো মাঝ রাতেই চার জন মাঝি চলে গিয়েছিলেন কালনা ঘাটে। রাতভর কয়েক হাজার মানুষকে পারাপার করতে হয়েছিল। ভোরে নিজেদের জায়গায় অর্থাৎ গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে চলে আসেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০১:৩৩
গুপ্তিপাড়া খেয়াঘাটে যাত্রীদের ভিড়। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সুশান্ত সরকার।

গুপ্তিপাড়া খেয়াঘাটে যাত্রীদের ভিড়। রবিবার ছবিটি তুলেছেন সুশান্ত সরকার।

রাত ১২টাতেই খবরটা চলে এসেছিল। থানা থেকে ফোন করে বলা হয়, দ্রুত ভুটভুটি নিয়ে কালনা ঘাটে যেতে হবে। সেই মতো মাঝ রাতেই চার জন মাঝি চলে গিয়েছিলেন কালনা ঘাটে। রাতভর কয়েক হাজার মানুষকে পারাপার করতে হয়েছিল। ভোরে নিজেদের জায়গায় অর্থাৎ গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে চলে আসেন তাঁরা।

ততক্ষণে শান্তিপুরে অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছে। কালনা-শান্তিপুরের মাঝে বন্ধ হয়েছে ফেরি চলাচল। আর তাতেই ভিড় ভেঙে পড়ে গুপ্তিপাড়া ঘাটে। অন্য দিন দু’টি ভুটভুটি চললেও পরিস্থিতি আঁচ করে রবিবার তিনটি ভুটভুটি চালানো হয়। কালনা ঘাট বন্ধ থাকায় সকাল থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ গুপ্তিপাড়া ঘাটে চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে কেউ এসেছেন নৌকোডুবির পরে প্রিয়জনের খোঁজে কেউ বা ব্যক্তিগত কাজে। ফলে অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে দুপুর পর্যন্ত হিমশিম খেতে হয় মাঝিদের। বলাগড়ের বিডিও মুদদসর মোল্লা এবং ওসি বরুন মিত্র যাত্রী পারাপারের কাজে তদারকি করতে ফেরিঘাটে চলে আসেন।

এই ঘাটে ভেসেলে গাড়ি পারাপার করা হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়ায়, ভেসেলে করেও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে হয়। মহকুমাশাসক (সদর) সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘ভুটভুটিতে অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না ওঠেন, সে দিকে প্রশাসনের তরফে গুপ্তিপাড়া ঘাটে নজর রাখা হচ্ছে। ভেসেলে ভারী গাড়ি যাতে না তোলা হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’

দুপুরে গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে এসেছিলে ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা শাড়ি ব্যবসায়ী নবজিৎ বসাক। তিনি শান্তিপুরে যাবেন। জানালেন, ব্যবসার কাজে নিয়মিত শান্তিপুরে যেতে হয় তাঁকে। কালনা ঘাট বন্ধ থাকায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার ঘুরে গুপ্তিপাড়ায় এসেছেন। খামারগাছির বধূ কণিকা পাল বলেন, ‘‘শান্তিপুরে আমার মামার বাড়ি। মামা–মামি কালনায় ভবা পাগলার মেলায় গিয়েছিলেন। সকাল থেকে তাঁদের ফোনে পাচ্ছি না। তাই মামারবাড়ি যাচ্ছি।’’

শান্তিপুরের মিলের মাঠ এলাকার বাসিন্দা, তাঁত ব্যবসায়ী সমর সরকারের দাদা সঞ্জিৎ এবং বৌদি সুপর্ণাও ভবা পালগার মেলায় গিয়েছিলেন। তিনিও দাদা-বৌদির খোঁজ পাচ্ছেন না। চোখেমুখে একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বছর পঁয়ত্রিশের সমরবাবু বললেন, ‘‘কী করব ভেবে না পেয়ে শান্তিপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ ডায়েরি নিল না। এখন কালনায় যাচ্ছি, যদি খোঁজ পাই!’’

প্রসঙ্গত, কালনা এবং শান্তিপুরের মাঝে ভুটভুটিতে প্রতি দিন বহু মানুষ যাতায়াত করেন। কালনার উল্টোদিকে শান্তিপুরে ঘাটে ছ’টি নৌকো জনতার রোষে পুড়ে যাওয়ায় ওই ঘাটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন। ফলে এ ক’দিনও গুপ্তিপাড়ার উপর বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করতে এই ফেরিঘাটের পরিকাঠামো কতটা তৈরি, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। নিত্যযাত্রীদের অনুযোগ, এই ফেরিঘাটে ছোট ভুটভুটিতে যাত্রী পারাপার করা হয়। আর রাতে গুপ্তিপাড়া ঘাটে যাতায়াত করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শান্তিপুরের দিকে ঘাটে পর্যাপ্ত আলো থাকলেও গুপ্তিপাড়ার চিত্র উল্টো। এখানে ফেরিঘাটে টিমটিম করে আলো জ্বলে বলে অভিযোগ। তা ছাড়া ভুটভুটিতে আলোর কোনও ব্যবস্থা নেই। অতীতের লঝঝড়ে ব্যবস্থার মতোই সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের অন্ধকার নৌকোয় পার হতে হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনও নজর নেই।

সূত্রের খবর, গুপ্তিপাড়া-শান্তিপুর ফেরিঘাটে ভুটভুটি বা ভেসেলে যাত্রী বা গাড়ি পরিবহণের যে টাকা নেওয়া হয়, তার ভাগ হুগলি জেলা পরিষদ, বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতি বা স্থানীয় পঞ্চায়েত পায় না। সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে শান্তিপুর পুরসভা। ফলে শান্তিপুরের দিকে ফেরিঘাটে আসার রাস্তা পিচের হলেও বা আলোর ব্যবস্থা থাকলেও গুপ্তিপাড়ায় ফেরিঘাটে যাওয়ার রাস্তা এখনও কাঁচা। রাস্তার ধারে আলোও নেই।

এই ঘাটে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ফেরি পারাপার শুরু হয়। শেষ খেয়া রাত ৯টা ২০ মিনিটে। লিজগ্রহিতা বিভাস বিশ্বাস বলেন, ‘‘রবিবার সকাল থেকে বহু মানুষ এই ঘাট দিয়ে পারাপার করেছেন। নিরাপদে মানুষকে পৌঁছে দিতে আমরা তৈরি আছি। অতিরিক্ত ভিড় হলে ভেসেলেও পারাপারের ব্যবস্থা করা হবে।’’ নৌকোয় আলো না থাকার কথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন‌, ‘‘গুপ্তিপাড়া ঘাটে আলো লাগানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। নৌকোয় আলো লাগানোর জন্য কী করা যায়, আলোচনা করে দেখব।’’

Guptipara ferry ghat ferry ghat Guptipara closed
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy