E-Paper

কুনুরে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন যুবক

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে গুসকরার বাসিন্দা ওই কিশোর মেলবন্ধন সেতুর কাছে কুনুর নদীতে আচমকা ঝাঁপ দেয়।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০০
সঞ্জয় সাহানি।

সঞ্জয় সাহানি। নিজস্ব চিত্র।

তখন দুপুরবেলা। অনেকেই ছিলেন কুনুরের ঘাটের আশপাশে। তাঁদের সামনেই জলে ঝাঁপ দেয় বছর চোদ্দর এক কিশোর। ওই পথেই মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির এক যুবক। ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনেই নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় উদ্ধারও করে আনেন ওই কিশোরকে।

ওই কিশোরের বাবা বলেন, “আমার ছেলে কাউকে কিছু না বলেই সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ওই যুবক উদ্ধার না করলে কি বিপদ হত জানি না। ঈশ্বর ওকে দেবদূতের মত পাঠিয়ে আমার একমাত্র ছেলের জীবন বাঁচিয়েছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে গুসকরার বাসিন্দা ওই কিশোর মেলবন্ধন সেতুর কাছে কুনুর নদীতে আচমকা ঝাঁপ দেয়। তখন সেখানে কয়েক জন দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা প্রথমে হতচকিত হয়ে পড়েন। পরে চিৎকার করতে থাকেন। সেদিকেই বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির সঞ্জয় সাহানি। জলে ঝাঁপ দিয়ে কিছুক্ষণ পরে ওই কিশোরকে কাঁধে করে পাড়ে তোলেন তিনি। চিৎ করে শুইয়ে তার পেট ও বুকে চাপ দিয়ে জল বার করেন। ততক্ষণে অন্যেরাও এসে নেতিয়ে যাওয়া ওই কিশোরের হাতের তালু ও পায়ের তলা ম্যাসাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এরপরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, পুলিশের ঝামেলার ভয়ে ওই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনও ভাবে খবর পেয়ে গুসকরা রেলফটকের কাছে কর্তব্যরত গুসকরা ট্রাফিক গার্ডের এক কর্মী সৌভিক দাস তড়িঘড়ি মোটরবাইক নিয়ে সেখানে পৌঁছন। স্থানীয় এক জনের সাহায্যে ওই কিশোরকে বাইকের পিছনে বসিয়ে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। আপাতত সুস্থ ওই কিশোর।

গুসকরা শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের শিবতলা পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় বলেন, “আমি ও দিক দিয়ে বাইক নিয়ে আসার সময় ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে দেখি এক কিশোর নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। কিছু না ভেবে তাকে বাঁচাতে মরিয়া ভাবে জলে ঝাঁপ দিই। ততক্ষণে জলের তোড়ে সে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে তার মাথার চুলগুলো দেখা যাচ্ছে। যে জায়গায় সে ডুবেছিল, সেখানে জলের ঘূর্ণি ছিল। নদীর গভীরতাও বেশি ছিল। তল পাচ্ছিলাম না। ওর চুল ধরে টেনে পরে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসি। পাড়ে তোলার পরে শুশ্রূষাও করি।’’ কোথায় শিখলেন এই পদ্ধতি? সঞ্জয় জানান, “ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ায় আর পড়াশোনা করা হয়নি। এখন বস্তা সেলাই করে সংসার চালাই। মোবাইলেই এ সব দেখে শিখেছি।’’ সঞ্জয়ের মা ববিতা দেবী বলেন, “ছেলে একজনের জীবন বাঁচিয়েছে এটাই বড় কথা। মা হিসেবে গর্ব হচ্ছে।’’

প্রশংসা করেছেন গুসকরা ট্রাফিক গার্ডের ওসি আশিস লায়েকও। তিনি বলেন, “এক জন ডুবে গিয়েছে শুনে ওই ট্রাফিক হোম গার্ড সেখানে পৌঁছে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এটা আমাদের কর্তব্য।’’ গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোনও কিছুই ওই যুবকের কাজের প্রশংসার জন্য যথেষ্ট নয়। পুরসভার তরফে ওঁকে পুরস্কৃত করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kunur river Guskara

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy