Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হকারের দাপটে কি চলা যাবে ফুটপাথে, চিন্তায় পথচারীরা

ফুটপাথে শেষ কবে সুস্থ ভাবে হেঁটেছেন, মনে পড়ে না। এ বার ফুটপাথে আর আদৌ পা রাখতে পারবেন কি না, সে নিয়ে সংশয়ে আসানসোলের পথচারীরা। শহরের ফুটপাথ এমনিতেই হকারদের দখলে। এ বার রাজ্য সরকারের নতুন হকার-নীতিতে সেই সমস্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন শহরের মানুষজন।

হাঁটা দায়। আসানসোল বাজারে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

হাঁটা দায়। আসানসোল বাজারে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

ফুটপাথে শেষ কবে সুস্থ ভাবে হেঁটেছেন, মনে পড়ে না। এ বার ফুটপাথে আর আদৌ পা রাখতে পারবেন কি না, সে নিয়ে সংশয়ে আসানসোলের পথচারীরা।

শহরের ফুটপাথ এমনিতেই হকারদের দখলে। এ বার রাজ্য সরকারের নতুন হকার-নীতিতে সেই সমস্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন শহরের মানুষজন। অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে ফুটপাথে ব্যবসা চালানোর জেরে স্থায়ী দোকানের মালিকেরা ব্যতিব্যস্ত। এ বার ক্রেতাদের দোকানে ঢোকার রাস্তাটুকুও না বেদখল হয়ে যায়, মুখ্যমন্ত্রী হকারদের লাইসেন্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় এমন আশঙ্কায় ভুগছেন সেই দোকান মালিকেরা। হকারেরা অবশ্য সরকারের এই ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত। ইতিমধ্যে শহর জুড়ে মিছিলও করেছেন তাঁরা। পুরসভাও জানিয়েছে, সরকারের লিখিত নির্দেশ হাতে পেলেই কাজে নামা হবে।

আসানসোল বাজার এমনিতেই শিল্পাঞ্চলে জতুগৃহ হিসেবে পরিচিত। হাটন রোড থেকে রাহা লেন পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার একটি ফুটপাথ রয়েছে বাজারে মধ্যে। এগারো ফুট চওড়া এই ফুটপাথের প্রায় পুরোটাই হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। হেঁটে যেতে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করতে হয় পথচারীদের। ঝামেলা এড়াতে অনেকেই নিয়মিত জি টি রোড ধরে হাঁটাচলা করেন। তার জেরে আবার রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। বাড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও।

প্লাস্টিকের ছাউনি খাটিয়ে রমরমিয়ে ফুটপাথে ব্যবসা চালানো নিয়ে দমকলের কর্তারা অনেক বার সতর্ক করেছেন পুর কর্তৃপক্ষকে। তারা সাফ জানিয়েছে, আগুন লাগলে গাড়ি ঢোকার জায়গা নেই। নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে বাজারের বড় অংশ। বছর কয়েক আগে বাজারের মধ্যে পরপর দু’টি অগ্নিকাণ্ডে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল দমকলের। ফুটপাথে হকারদের অস্থায়ী ছাউনি তড়িঘড়ি খুলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার যদি স্থায়ী ছাউনি তৈরি করেন হকারেরা, সে ক্ষেত্রে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা ভেবে শিউরে উঠছেন বাজারের ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই।

বাজারের দোকানদারদের অভিযোগ, ফুটপাথ দখল করে হকারেরা ছাউনি দেওয়ায় তাঁদের দোকানগুলি ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ক্রেতারা দোকান খুঁজে পেতে হিমসিম খান। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটা যায় না বলে ক্রেতারা দোকানেও ঢুকতে চান না। এর ফলে অনেকটাই মার খায় ব্যবসা। কখনও ফুটপাথ হকারমুক্ত হলে ব্যবসার সুদিন ফিরবে, এই আশায় ছিলেন স্থায়ী দোকানদারেরা। কিন্তু সরকারের হকার-নীতি ঘোষণার পরে তাঁরা খানিকটা হতাশ। বাজারের এক দোকান মালিক লালবাবু দাসের কথায়, “ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি সরকারের এমন ঘোষণায় আমাদের দুর্দিন দেখতে হবে।” আর এক দোকানদার মিঠু ঘাঁটি বলেন, “সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের আর কী করণীয়! শুধু আশা করব, আমাদের কথাও ভাবা হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, “হাটন রোড থেকে রাহা লেন পর্যন্ত যে কোনও সরকারি কর্তা হেঁটে গেলেই বুঝবেন হকার নীতি এখানকার জন্য কতটা অপ্রাসঙ্গিক।”

ফুটপাথের হকার সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সঙ্কিত মহিলা পথচারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাহা লেন অঞ্চলের এক শিক্ষিকার মন্তব্য, “হকারদের দৌরাত্ম্যে এই পথে যাতায়াত করা কতটা অস্বস্তিকর, তা হয়তো নেতা-নেত্রীরা জানেন না।” শহরের প্রাক্তন মেয়র সিপিএমর তাপস রায় দাবি করেন, আসানসোল বাজারে ফুটপাথের এই সমস্যা মেটাতে গির্জা মোড় এলাকায় আলাদা একটি হকার মার্কেট তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের আমলে। তাঁর অভিযোগ, ২০০৯ সালে তাঁরা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের আমলে ফের সমস্য তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “নীতি প্রণয়নের আগে সব পক্ষের কথা ভাবা উচিত।”

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা আসানসোলেও কার্যকর হবে ধরে নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তীর বক্তব্য, “সস্তা রাজনীতির জন্য সাধারণ নাগরিককে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে।” সিপিএমর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নজর রাখছি। নাগরিকদের দুর্গতি হলেই আন্দোলনে নামব।” পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা শহরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “সরকারি নির্দেশ এলে আমরা কার্যকর করতে বাধ্য। তবে এখনও নির্দেশ পাইনি।” পাশাপাশি তিনি জানান, ফুটপাথ সংস্কারের জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

foothpath hawker licence asansol sushanta banik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy